ফ্রিল্যান্সিং ছোট গল্পঃ প্রতিশোধ

বেকার ছেলেটাও একদিন ভালো চাকরি পাবে! শুধু পাবে না চাকরির জন্য হারিয়ে যাওয়া প্রিয় মানুষটাকে। প্রেমিকা যদি ব্যাংকের ক্যাশিয়ার পদের মত ভাল একটা চাকরি পেয়ে, তার বেকার প্রেমিককে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে ফেলে চলে যায়, তবে তাকে কি বলে। একে বিশ্বাস ঘাতকতা ছাড়া, আর কিইবা বলা চলে। তুমিত বেকার, ১ টাকাও ইনকাম নেই, আমি দেখ কত ভাল চাকরি পেয়েছি, তোমার সাথে আমার ঠিক যায় না, মানুষের সামনে মুখ দেখাব কিভাবে, এই ছিল তার অযুহাত। বেকার প্রেমিকের অনেক কাকুতি মিনতি আর কান্নাতেও তার মন গলেনি।
 
ছেলেটি তার প্রেমিকার থেকে প্রতারিত হয়ে, সেই শোককে পাথরে পরিণত করে লেগে থাকে। পন করে একদিন সফল হয়ে ঠিকই সবাইকে দেখিয়ে দেবে। কথায় আছে, এক মাঘে শীত যায় না, খারাপ সময়েরও একটা শেষ আছে, রাতের আঁধার ফুড়ে ঠিকই ভোরের আলো দেখা দেয়। সে মুখ গুজে একটানা লেগে থাকার ফল, হাতে নাতে পায়। বর্তমানে সে দেশ সেরা একজন সফল ফ্রিল্যান্সার। খারাপ সময় সে অনেকে আগেই পিছনে ফেলে এসেছে। পরিবারের পছন্দে সুন্দরী ঘরণী তার ঘরে। অনেক গুলো এ্যাওয়ার্ড তার ঘরের শোকেসে শোভা বর্ধন করছে। চারদিকে শুধু সাফল্য আর সাফল্য। তার মাসিক ইনকাম কত সেটা ঠিক জানা নেই। তবে মাসে তার বৌয়ের নামে, সেভিংসে এক লাখ টাকা রাখে, সেটা ভাল করেই জানি।
 
তার সাবেক প্রেমিকা, এখনো বেসরকারী ব্যাংকের ক্যাশিয়ার পদেই আছে। সকালের প্রথম ঘন্টা থেকেই তার কাজের প্রেশার শুরু হয়ে যায়। সব কাজ গুছিয়ে হিসাব মিলিয়ে, বাসায় ফিরতে ফিরতে তার অনেক সময় রাত ১০ টা পার হয়ে যায়। প্রচন্ড কাজের চাপে, দুপুরের খাওয়া প্রায়ই বিকেলে বা সন্ধ্যার দিকে, অনেকে সময়, ডেস্কে বসেই করতে হ্য়। কাজের প্রেশারে নিজের দিকে খেয়াল দিতে পারে না। রূপ লাবণ্য উধাও হয়ে গেছে অনেকে আগেই। কাজের চাপে মাথার চুলও কমে গেছে। ক্যারিয়ার গড়বে বলে, বিয়েটা একটু দেরি করে করবে বলে ঠিক করেছিল। ইদানীং পরিবারের চাপে, সে অবশ্য বিয়েতে রাজি হয়েছে, তার জন্য পাত্র দেখা হচ্ছে, কিন্তু কেন যেন ব্যাটে বলে ঠিক মিলছে না।
ওই দিকে আমাদের ফ্রিল্যান্সারের সুন্দরী স্ত্রী, নিয়ম করে প্রতি মাসের ঠিক ১ তারিখে, ব্যাগ ভর্তি করে করে ১ লক্ষ টাকা, তার নামে সেভিংসে রাখতে ব্যাংকে যায়। বলাই বাহুল্য একাউন্টটা, সেই সাবেক প্রেমিকার ব্যাংকে। সাবেক প্রেমিকা সবই জানে বোঝে, কিন্তু তার এখন, আর কিছু বলার নেই। ক্যাশিয়ার সাবেক প্রেমিকা, মুখ কালো করে, টাকা গুলো গুনে, রিসিট কেটে ফ্রিল্যান্সারের বউকে ফেরত দেয়। অনালাইন ব্যাংকিং এর এই যুগে, এভাবে ক্যাশ টাকা জমা দেয়ার কারণটা কি? যেখানে চাইলেই অনলাইনে সব সেরে ফেলা যায়। বিষয়টা আর কিছুই নারে ভাই, প্রতিশোধ! সুধুই প্রতিশোধ!
 
তার সাবেক প্রেমিকা যখন মুখ কালো করে টাকা গুলো মেশিনে গোনে, ফ্রিল্যান্সার দূরে দাঁড়িয়ে সেটা দেখে এক অভাবনীয় সুখ লাভ করে। এই সুখ হচ্ছে প্রতিশোধ নেয়ার! এর সাথে কোন কিছুর তুলনা চলে না।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *