একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের গল্প, ফ্রিলান্সিং এর টাকায় বাড়ি

অনেক সফল ফ্রিল্যান্সার আছেন, যারা অনেকটাই নিরবে থাকেন, হয়ত কোন ফ্রিলান্সিং গ্রুপের পোস্টে একটা দুইটা লাইক বা একটা ছোট কমেন্ট, তাদের কার্যক্রম এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ! অনেকে আছেন এসবের কিছুই করেন না। তার অর্থ এই না যে তারা স্বার্থপর, অন্যকে হেল্প করেন না। আসলে তারা প্রচার চান না। তারা নীরবে নিভৃতেই কাজ করেন, অন্যকে হেল্প করেন। আসলে নিরব কাজ সবথেকে সফল প্রচারক। অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম এই সব হিডেন হিরোদের নিয়ে কিছু লিখব। সেই ভাবনা থেকেই এই লেখা।

সফল ফ্রিল্যান্সার  Shapon Shekh ভাই আমার অনেক দিনের পরিচিত। বেশ কয়েক বছর ধরেই তাকে চিনি। এই লেখালেখি থেকেই তার সাথে পরিচয়। একই ক্যাটাগরিতে কাজ করি বলে, নিজেদের মধ্যে এটা নিয়ে অনেক কথা হয়। তিনি একজন গোপালী মানে গোপালগঞ্জ তার বাড়ি  গোপালগঞ্জ বাড়ি হলেও তার ভাগ্য তেমন সুপ্রসন্ন ছিল না  এই ফ্রিল্যন্সিং সেক্টরে তাকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে প্রতিষ্ঠা পেতে। আমার মত তাকেও একটা বড় পরিবার চালাতে হয়। ছোট ভাইবোন আর মাকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন। ভাইবোনদের পড়াশোনা সংসারের খরচ তাকে একাই বহন করতে হয়। পুরটাই তিনি ফ্রিল্যন্সিং করে আয় করেন। আর ঢাকা শহরের খরচের কথা নাই বা বললাম 

তিনি সব ধরনের কাজেই ট্রাই করেছেন। সব শেষে ফটোশপ ইমেজ ইডিটিং এ সফলতা পেয়েছেন। আসলে লেগে থকালে আর ভাল দক্ষতা থাকলে, ছোট কাজেও সফলতা পাওয়া যায়। সেটা কি রকম? তিনি একজন বায়ারের ৩০ হাজার ডলারের ০৬ মাসের একটা কাজ মাত্র শেষ করেছেন  এই পুরটা সময় তার সাথে আমার এই প্রজেক্ট নিয়ে কথা হয়েছে। আমি তাকে টিম নিতে বলেছিলাম। কিন্তু তিনি নাছোড় বান্দা, একাই পুরো প্রোজেক্ট শেষ করেছেন   অবশ্যই কাজটাও ছিল সহজ আর বায়ার ছিল অনেক ভাল। শুনলে অবাক হবেন এই ক্লায়েন্ট তিনি কোন মার্কেটপ্লেস থেকে পাননি। তার দুইটা ইউটিউব চ্যানেল আছে (চাইলে দেখতে পারেন https://goo.gl/oJRgHL একটা ফটোশপ আরকটি পিডিএফ এর উপর। এই চ্যানেল থেকেও তার কিছু ইনকাম হয়  যদিও আমার মতে চ্যানেলের ভিডিও গুল আরও প্রফেশনাল মানের করা যেত, বিশেষ করে যদি ভয়েস এড করা যেত। তবে তিনি চেষ্টা করেছেন, এটাই বা কম কিসের! আর এই চ্যানেলের ভিডিও দেখেই সেই বায়ার তাকে নক করে। পরে People Per Hour এ তার প্রজেক্ট চালু হয়। পাশাপাশি Fiverr এ তিনি অনেক ভাল করছেন। সব মিলিয়ে তাকে একজন সফল ফ্রিল্যন্সার বলা যায়। তবে আর সব সফল ফ্রিল্যন্সারের মত তার এই পথচলা মসৃণ ছিল না।

এবার আসি তার বাড়ি করার প্রসঙ্গে। তারা মায়ের ইচ্ছা নিজদের একটা সুন্দর বাড়ি করার। তার যে বাজেট তাতে ঢাকা শহরের আশপাশে একটা ছোট ফ্লাট হয়ত হয়ে যেত। কিন্তু তার মায়ের ইচ্ছা গ্রামে একটা বড় বাড়ি করার। তাই তিনি সেখানেই বাড়ির কাজ শুরু করেছেন। তিন তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ি। আপাতত নিচতালার কাজ চলছে। আশা করা যায় তার বাড়ির কাজ আগামি কয়েক মাসের মধ্যেই শেষ হবে। আমরা সবাই তার বাড়ির কাজ যেন দ্রুত সফল ভাবে শেষ হয় এই জন্য প্রার্থনা করি।

ফ্রিলান্সিং করতে যেয়ে একটা বিষয় উপলব্ধি করেছি। সেটা হল, ফ্রিল্যন্সিং এ আপনি কত টাকা ইনকাম করতে পেরেছেন সেটা বড় বিষয় না। বিষয়টা হল কত টাকা সেভ করেছেন এবং সেটা দিয়ে আপনি কি ধরনের সম্পদ করেছেন। এমন সম্পদ যেতা ধরা যায়। যেমন স্বপন ভাই বাড়ি করার পর তিনি বলতে পারবেন এতা তার ফ্রিলান্সিং এর টাকায় করা। একজনকে চিনি পুরা ফ্রিল্যন্সিং এর টাকায় ধুম ধাম করে বিয়ে করেছেন। আবার গত বছর একজন ফ্রিলান্সারের সাথে কথা হয়েছিল। তিনি ফ্রিলান্সিং করে ইনকাম করা তার ৫৭ লক্ষ টাকা শেয়ার মার্কেটে হারিয়েছেন। তার সব কিছু গেছে। এই শেয়ার বাজারের পিছনে ছুটতে যেয়ে তার আপওয়ার্ক এর টপ রেটেড প্রোফাইলও গেছে। আফাসোস লাগছিল তার জন্য।

এবার একটা রিয়েল লাইফ জোকস বলি।

অনেক দিন আগের কথা, গ্রামের এক দরিদ্র লোক কিভাবে যেন, ইঁদুর মারার এক কার্যকরী ঔষধ আবিস্কার করে ফেলল। বিশাল তার ইঁদুর মারা ঔষধের চাহিদা। তিনি সাপ্লাই দিয়ে কুল করতে পারেন না  দুহাতে টাকা ইনকাম করেন। এত টাকা যে হিসেব করার সময় নেই। তাই তিনি বুদ্ধি করে সেই টাকা, তার ধান রাখার গোলা ঘরে, একটা মাটির কলশির মধ্যে লুকিয়ে রাখতেন। এভাবে বেশ অনেকদিন দিন চলে গেল। ইতিমধ্যে মার্কেটে আরও প্রতিযোগী চলে আসাতে তার চাহিদা দিন দিন কমতে লাগল। তার মতে তিনি লাখপতি হয়েছেন অনেক আগেই   এত দিনে একটু অবসর পাওয়াতে ভাবলেন এবার টাকাগুলো গুনে দেখি কত হল! জমিজমা, বাড়ি গাড়ি, বিয়ে শাদি করা লাগবে না? টাকা গোনার জন্য তিনি কলসের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিলেন, আর অবাক হয়ে দেখেন তারা সব টাকা, ইদুরে কেটে টুকরা টুকরা করে ভুসি বানিয়ে ফেলেছে  তার অবস্থা আর নাই বা বললাম 

আমাদের ফ্রিলান্সারদের অবস্থা যেন এমন না হয়। আমাদের ফ্রিল্যন্সিং এর টাকা অনেকটাই ভার্চুয়াল। যে কোন সময় হাওয়া হয়ে যেতে পারে। তাই যতদ্রুত পারেন, ডলার ভাঙ্গিয়ে টাকা করবেন। এই টাকা দিয়ে স্বপন ভাইয়ের মত বাড়ি করবেন, জমি কিনবেন, ব্যাংকে রাখবেন, ভাল মেয়ে দেখে বিয়ে করবেন   ইত্যাদি ইত্যাদি, তাহলেই না আপনার ফ্রিলান্সিং জীবন সার্থক হবে। আপনার সম্পদগুলোর দিকে তাকাবেন এর মনে মনে বলবেন এগুলো আমার ফ্রিলান্সিং এর টাকায় করা  এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি পাবেন। কাজে আরও উৎসাহ পাবেন।

স্বপন ভাইয়ের আরও দীর্ঘ সফল ফ্রিলনাসিং জীবন কামনা করে শেষ করছি।

ধনবাদ!

Similar Posts