ভ্রমনঃ নতুন মিনি কক্সবাজার, উচিতপুর হাওড়, নেত্রকোনা,
ছোটবেলা থেকেই আমার ঘোরাঘুরির অভ্যাস, মনে পড়ে ছোটবেলায় সুযোগ পেলেই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়তাম। আমার বন্ধুবান্ধব কোন কোনো কালেই তেমন একটা ছিল না। এদিক দিয়ে আমি অভাগা। তাই প্রায় সময়ই একা একাই ঘুরতে বের হতাম। নাম না জানা অনেক জায়গায় চলে যেতাম, নদীর ধারে, বড় দিঘির পাশে, জঙ্গলে, বড় ধান খেতের পাশে, ভাল লাগা যে কোন জায়গায় বসেই, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতাম। এরপরে আবার বাসায় চলে আসতাম। বাসায় খুব একটা সমস্যা হত না। আসতে দেরি হলে বড়জোর মায়ের বকুনি খেতাম, ঝামেলা বলতে এতটুকুই ছিল। যেহেতু ছোট ছিলাম, তাই যেন হারিয়ে না যাই, তার জন্য একটা টেকনিক ব্যবহার করতাম। টেকনিকটা খুব মজার। সম্ভবত একটা সিনেমাতে দেখেছিলাম, সিনেমার নায়ক যেন, জঙ্গলে হারিয়ে না যায়, এজন্য সে গাছে, গাছে, চক দিয়ে মার্ক করে রাখত। আমিও সেম টেকনিক ইউজ করতাম, তবে চক দিয়ে দাগ দিতাম না। অচেনা কোন জায়গায় গেলে, আমি চোখে পড়ে এমন কিছু মার্ক করে রাখতাম। যেমন বড় বিল্ডিং, মসজিদ, বড় গাছ ইত্যাদি ইত্যাদি। ফলে ফিরে আসতে কোন সমস্যা হত না। চাকরি জীবনের শুরুতেই মার্কেটিং এর চাকরি পেয়ে যাই। ফলে প্রচুর ঘোরাঘুরি হয়েছে। সাথে ছিল কোম্পানির দেয়া মটরসাইকেল। আমাকে আর পায় কে।
বাংলাদেশের অনেক জায়গায় ঘুরেছি। দূরে কোন অফিশিয়াল ট্যুরে গেলে, আমার প্রথম কাজ ছিল ওই এলাকার দর্শনীয় সব সুন্দর জায়গা গুলো ভ্রমণ করা, আর সেখানের সব থেকে ভালো ভালো খাবার গুলো, একটু চেখে দেখা। চাকরী সূত্রে বেশ কয়েকটি দেশও ভ্রমণের সুযোগ হয়েছে। কিন্তু আফসোস আনলাইন ফ্রিলান্সিং শুরু করার পর, বলা যায় দিনের পুরোটা সময় ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে থাকতে হয়। ফলে ঘোরাঘুরি সুযোগ গত পাঁচ বছরে তেমন একটা হয়নি। ঘোরাঘুরি এক রকম বন্ধ। জীবনটা একঘেয়ে আর পানসে লাগছিল। তাই ঠিক করলাম এই বছরের বাকী সময়টাতে সুযোগ পেলেই ঘোরাঘুরি করব। আর এখন যেহেতু নিজে ব্লগ আছে, তাই সেখানে কিছু ভ্রমন কাহিনীও লেখা যাবে। সৃতি হিসেবে রয়ে যাবে। কথা না বাড়িয়ে আজকের ভ্রমণ কাহিনী শুরু করি।
আমাদের Mymensing Helpline ফেসবুক গ্রুপে দেখলাম, নতুন আবিষ্কৃত মিনি কক্সবাজার নিয়ে অনেক মাতামাতি চলছে। অনেকেই সেখানে ট্যুর দিয়ে এসে রিভিউ দিচ্ছে ছবি দিচ্ছে। জায়গাটা হচ্ছে নেত্রকোনার, মদন উপজেলার, উচিতপুর হাওড়। বর্ষাকালে অনেকটা মিনি কক্সবাজারের মত অবস্থা হয়। যেহেতু নতুন আবিষ্কৃত জায়গা, তাই লোকজন এখনো বিশেষ জানে না। ফলে ভিড় কিছুটা কম। তাই ভাবলাম আমি আর বাদ থাকি কেন। যেহেতু পাশের জেলা, কাজেই এক দিনেই ট্যুর দেয়া সম্ভব।
যেই কথা সেই কাজ গত ১ জুলাই, রওনা দিলাম। সাথে ছিল আমার প্রিয় বন্ধু শুভ ইসলাম ভাই। সকাল দশটায় ময়মনসিংহ ব্রিজের মোড় থেকে, দুজনে রওনা দিলাম। মহুয়া গেটলক সার্ভিস। ভাড়া নিল মাত্র ৫৫ টাকা। নামে গেটলক, আসলে লোকাল বাস। বসে প্রচুর ভিড় হয়, সিট না পেলে সমস্যা। তাই টিকেট কেটে সিটে বসা উচিৎ। মাত্র ৪৫ কিলোমিটার রাস্তা, কিন্তু সময় লাগল প্রায় সোয়া একঘণ্টা। যেহেতু কাছের মানুষ সাথে আছে, তাই দুজনে গল্প করতে করতে, কখন যে সময় পার হয়ে গেল, বুঝতেই পারলাম না। প্রায় নয় বছর পরে নেত্রকোনা যাচ্ছি। আগে যখন চাকরি করতাম তখন প্রায় প্রতি সপ্তাহেই নেত্রকোনা যেতে হত।
নেত্রকোনা পৌঁছে, আমার সে সময়ের সহকর্মী শাহীনকে কল দিলাম, উদ্দেশ্য তার সাথে একটু দেখা করা, আর কিভাবে উচিতপুর যাওয়া যায় এটার বিস্তারিত জানা। তার ক্যারিয়ার আমার হতেই শুরু হয়েছিল, কিন্তু আফসোস, এই ৯ বছরেও তার প্রমোশন হয়নি। আসলে মার্কেটিং লাইনে, সহজ সরল লোকের ভাত নেই। অনেক চালাক চতুর হতে হয়। তবে আশা করা যায় এ বছর তার প্রমোশন হবে। সে দেশের বড় একটা ফার্মাসিটিক্যাল কম্পানিতে আছে। কল দেওয়ার মিনিট পাঁচেকের মধ্যে সে বাসস্ট্যান্ডে চলে আসলো। প্রায় ৯ বছর পর তার সাথে দেখা, আমাকে সে মনে রেখেছে দেখে অনেক ভাল লাগল।
![](https://zamantalk.com/wp-content/uploads/2019/07/1.Sahin-and-me.jpg)
কে বলবে ছেলেটার সাথে ৯ বছর পরে দেখা হচ্ছে। মনে হল এইত সেদিন এক সাথে চা খাচ্ছিলাম। কিছুটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লাম। একসাথে ছবি তোলা হলো। সে আগেই মতই আছে। আমি শুধু সাইজে ডবল হয়ে গছি। শাহিনের কাছ থেকে পরামর্শ নিলা্ম, কিভাবে উচিতপুর সহজে যাওয়া যায়। তার পরামর্শ অনুযায়ী, একটা রিক্সা নিয়ে আমরা মদন বাস স্ট্যান্ডে চলে আসলাম। ভাড়া নিল ত্রিশ টাকা, ভাড়াটা একটু বেশি মনে হলো। কিন্তু কিছু করার ছিল না, নতুন এলাকায় এসেছি। কাজেই মানুষ সুযোগ নেবেই।
নেত্রকোনা সদর থেকে মদন উপজেলার দূরত্ব খুব একটা বেশি না, মাত্র ৩০ কিলোমিটার। বাস ভাড়া ৫০ টাকা নিল। উল্লেখ থাকে যে এই রাস্তায় সিএনজি খুব একটা চলে না। আর সিএনজি রিজার্ভ নিলেও ভাড়া অনেক বেশি। কাজেই বাসই একমাত্র ভরসা। দূরত্ব অনুযায়ী, বাস ভাড়া একটু বেশি মনে হল। তবে রাস্তা অনেক ভাল, টিকেট কেটে সিটে বসলাম। নির্দিষ্ট সময়, মানে বেলা ১২ টায়, বাস হেলেদুলে রওনা দিল। বাস এত আস্তে আস্তে চলছিল যে, মনে হচ্ছিল শুধু শুধু টিকিট কেটেছি, তার থেকে হেঁটে রওনা হলে, মনে হয় আরো আগে পৌঁছে যেতাম। ৫০ টাকা নগদ বেঁচে যেত। সুবর্ণ ভাই সাথে থাকাতে তেমন সমস্যা হচ্ছিল না। গল্প করে সময় বেশ সুন্দর ভাবেই কেটে যাচ্ছিল।
![](https://zamantalk.com/wp-content/uploads/2019/07/Ucitpur_01.jpg)
গল্প করতে করতে কখন মদনে পৌঁছে গেলাম বুঝতে পারলাম না। বেলা দেড়টায় মদন পৌঁছলাম। বাস স্ট্যান্ড থেকে উচিতপর ৫/৬ কিঃমিঃ দূরে হবে। আটোতে ভাড়া ৩০ টাকা জনপ্রতি। অটোতে উঠে বসলাম। আর দশটা উপজেলার মতই মদন উপজেলা, স্কুল, কলেজ, বাজার, সরকারী অফিস ইত্যাদি ইত্যাদি। হাতে সময় নিয়ে আসিনি তাই মদন উপজেলার দর্শনীয় কোন স্থান থেকে থাকলেই দেখার উপায় ছিল না। উচিতপুর পোঁছতে বেশি সময় লাগল না। যখন আমরা কাছাকাছি চলে এসেছি, তখনই চারিপাশে থৈ থৈ পানি দেখতে পেলাম। মনে হচ্ছিল যেন কক্সবাজার চলে এসেছি। কোন নতুন জায়গায় গেলে মানুষজন ছেঁকে ধরে। বিভিন্ন ধরণের অফার নিয়ে সবাই চাপাচাপি করে। পকেট খালি হতে বেশি সময় লাগে না। আমাদের ক্ষেত্রেও তাই হল। ঘাটে নামতেই, ট্রলার ওয়ালারা চেপে ধরল। আমার এই ধরনের অভিজ্ঞতা আছে। এই সময় যেটা করতে হয় সেটা হচ্ছে কারো কথায় পাত্তা না দিয়ে, কোন একটা দোকানে বা হটেলে চলে যাওয়। হাল্কা নাস্তা পানি করা। এর পরে হোটেলের ম্যানেজার বা দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলেই সে মোটামুটি এলাকার নাড়ি নক্ষত্র সব বলে দেবে। আমারও এই টেকনিক খাটালাম। এক দোকানদারের কাছ থেকে মোটামুটি সব জেনে নিলাম।
![](https://zamantalk.com/wp-content/uploads/2019/07/Ucitpur_20_Bolai-Bridgei.jpg)
চারিপাশে যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি, আর মোটামুটি বেশ বাতাস ছিল ফলে প্রচুর বড় বড় ঢেউ তিরে এসে ঝাপিয়ে পড়ছিল। আসলেই মনে হচ্ছিল এটা কক্সবাজার। অসাধারণ জায়গা, খুব ভাল লাগছিল। আমি বলব সুযোগ থাকলে সবার এখানে, অন্তত একবার ভ্রমণে আসা উচিত। তখন বেলা প্রায় দুইটা বাজে, কি করা যায় চিন্তা করছিলাম, আমার ব্যাগে কাপড় চোপড় সবই ছিল, কাজেই গোসলের কোন সমস্যা নেই। এই মিনি কক্সবাজারের সব থেকে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে, প্রায় দুই কিঃমিঃ দূরে বলাই ব্রিজ। ঘাট থেকে ব্রিজ পর্যন্ত এই দুই কিঃমিঃ রাস্তা পুরটাই কংক্রিটের। রাস্তাটা খালিয়াজুরির দিকে চলে গেছে। শুকনা মৌসুমে রাস্তায় যান চলাচল করে। কিন্তু বর্ষাকালে যখন চারপাশে পানি পানি চলে আসে, তখন এই দুই কিলোমিটার রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যায়। হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি থাকে, কাজেই যে কেউ অনায়াসে এই দুই কিলোমিটার রাস্তা হেটে পার হয়ে সেই ব্রিজে চলে যেতে পারবে। এ এক অসাধারন অনুভূতি
![](https://zamantalk.com/wp-content/uploads/2019/07/Ucitpur_02.jpg)
চাইলে ২০ টাকা ভাড়া দিয়ে ট্রলারে করে ব্রিজে চলে যাওয়া যায়। সময় বাঁচাবার জন্য আমরা সেটাই করলাম। ব্রিজে গেলে মনে হবে কোন একটা দ্বীপে আপনি চলে এসেছেন। চারিপাশে শুধু পানি আর পানি এবং একটু ভালো করে তাকালে আপনি দেখতে পারবেন দূরে, উচু উচু পাহাড়। এই পাহাড় গুলো আসলে ভারতের মধ্যে পড়েছে। আমি জিজ্ঞেস করে জেনেছি ওই পাহাড় পর্যন্ত ট্রলার করে যাওয়া যায় এবং যেতে মোটামুটি একটা দিন সময় লাগে। কেউ চাইলে এই চ্যলেঞ্জ নিতে পারেন।
![](https://zamantalk.com/wp-content/uploads/2019/07/Ucitpur_05.jpg)
![](https://zamantalk.com/wp-content/uploads/2019/07/Ucitpur_06.jpg)
ব্রিজের সাথেই একটা সুন্দর ভাসমান রেস্টুরেন্ট নতুন তৈরি হয়েছে। নাম তাসিন ফুড পার্ক। যদিও খাবারের দাম একটু বেশি। তার পরেও প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে করতে খাওয়া, এটা একটা অসাধারন অনুভুতি। বেড়াতে আসলে অবশ্যই এখানে আসবেন। ভাল লাগবে। যেহেতু আমাদের ক্ষুধা একেবারেই ছিল না, তাই আমরা শুধু লাচ্ছি খেলাম। বেশ অনেকটা সময় বসে গল্প করলাম আর চার পশের সুন্দর দৃশ্যগুলো উপভোগ করতে লাগলাম। খুবই ভালো লাগলো, মোটামুটি আধা ঘন্টা ছিলাম।
![](https://zamantalk.com/wp-content/uploads/2019/07/Ucitpur_09.jpg)
![](https://zamantalk.com/wp-content/uploads/2019/07/Ucitpur_13_Tasin-Food-pard.jpg)
![](https://zamantalk.com/wp-content/uploads/2019/07/Ucitpur_11.jpg)
![](https://zamantalk.com/wp-content/uploads/2019/07/Ucitpur_08.jpg)
![](https://zamantalk.com/wp-content/uploads/2019/07/Ucitpur_13.jpg)
![](https://zamantalk.com/wp-content/uploads/2019/07/Ucitpur_12.jpg)
হাতে যেহেতু সময় ছিল না, এজন্য ফেরার তাগাদা ছিল। চারিপাশে এত সুন্দর পানি দেখে, নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। পানিতে নেমে পড়লাম। সুবর্ণ ভাইকে অনেক রিকোয়েস্ট করলাম, কিন্তু বেচারা লজ্জার কারনে নামল না। আমার আবার লজ্জা শরম একটু কম, পরিস্কার টলটল পানিতে নেমে, বাচ্চাদের মত বেশ অনেকক্ষণ দাপা দাপি করলাম। ভাল সাঁতার জানি বলে ভয় লাগল না। আপনি সাঁতার না জানলে এই ঝুকি না নেয়াই ভাল। অনেক স্রোত ছিল।
![](https://zamantalk.com/wp-content/uploads/2019/07/Ucitpur_15.jpg)
যে ট্রলারে করে ব্রিজে এসেছিলাম, কথা ছিল আধা ঘন্টা পরে সে এসে আমাদের আবার ফেরত নিয়ে যাবে। কিন্তু এক ঘন্টা পার হয়ে যাওয়ার পরেও সে এল না দেখে, আরেকটা ট্রলারে করে ফেরত চলে এলাম। পরে জেনেছি সে ভালো একটা ভাড়া পাওয়াতে, আমাদের কথা বেমালুম ভুলে ভাড়া নিয়ে চলে গেছে। তবে ভাল লাগল যে, বেশ কয়েক ঘণ্টা অসাধারণ সময় কাটাতে পেরেছি। ঘাটে প্রচুর ট্রলার পাওয়া যায়। এসব ট্রলার দূরে দূরে বিভিন্ন গন্তব্যে যায়। ভাড়াও খুব বেশি না। সকালে আসলে আপনি এসব ট্রলারে করে দূরে কোথাও অজানাতে চলে যেতে পারেন। কয়েক ঘন্টা ঘুরে আবার একই ট্রলারে চলে আসবেন। চারিপাশে শুধু পানি আর পানি, অসাধারণ একটা অভিজ্ঞতা হবে। এজন্য আমি বলবো সকালে এখানে চলে আসতে, সব থেকে ভালো হবে। কারন বিকালের দিকে প্রচুর পরিমাণে লোকজন বেড়াতে আসে, ফলে এখানে অনেক ভিড়ের সৃষ্টি হয়।
![](https://zamantalk.com/wp-content/uploads/2019/07/Ucitpur_07.jpg)
এছাড়া এখানে ঘন্টা চুক্তিতে ট্রলারে ভ্রমন করতে পারেন। ভাড়া যার কাছ থেকে যেমন নিতে পারে। সাধারণত ৩০০-৫০০ টাকা ঘণ্টা। একটা ট্রলারে অনায়াসে ১০/১২ জন উঠা যায়। যারা ঘোরাঘুরি খুব পছন্দ করেন, তবে আমি বলব ১০/১২ জন বন্ধু বান্ধব নিয়ে সারাদিনের জন্য একটা ট্রলার নিয়ে নেবেন। সারা দিনের জন্য ১০/১২ হাজার টাকা নিতে পারে। টলারের উপর ছাউনি আছে ফলে বৃষ্টিতে সমস্যা হয় না। রাতে ঘুমানও যায়। চাইলে রান্নাবান্নাও করা যাবে। রান্নার জিনিস পত্র নিয়ে উঠবেন। ইচ্ছা মত হাওড়ে ঘুরবেন। ট্রলারেই রান্না করবেন। চাঁদনী রাতে আকাশের নিচে বসে খাওয়া দাওয়া করা আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি এটা আপনার জীবনের একটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা হবে। আমার ইচ্ছা আছে সামনে যদি এরকম সুযোগ পাই, তবে বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে এমন একটা ট্যুর দেয়ার। বেলা তিনটার সময় আমরা আবার ঘাটে ফিরে আসলাম। মোটামুটি সাড়ে চারটার দিকে আমরা নেত্রকোনা শহরের নামলাম। খিদায় পেট চো চো করছিল। তই একটা লোকাল রেস্টুরেন্টে চারটা ডাল ভাত খেয়ে নিলাম।
নেত্রকোনা শহরে আসব, আর বালিশ মিষ্টি খাব না এটা কিভাবে হয়। শাহিনকে আবার কল দিলাম। সে বলল সোজা গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভান্ডারে চলে যেতে। সে জানালো গয়ানাথের মিস্টিই এখানে সব থেকে ভাল। মুলত বালিশ মিষ্টি তারাই সব থেকে ভাল বানায়। যে কোন রিক্সাওয়ালাকে গয়ানাথের মিষ্টান্ন ভান্ডার বললেই নিয়ে যাবে। আমরা একটা রিক্সা ভাড়া করে সরাসরি গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভান্ডার চলে গেলাম। বেশ বড় একটা হোটেল, শুধু মিষ্টি আইটেম পাওয়া যায় পাশাপাশি পরে ডাল ভাজি।
![](https://zamantalk.com/wp-content/uploads/2019/07/Ucitpur_18.jpg)
আমরা বালিশ মিষ্টি দেখলাম। এখানে মূলত তিন সাইজের বালিশ মিষ্টি পাওয়া যায়। বড় আকারের বালিশ মিষ্টি যেটা ১ কেজি ওজনের, সেটার দাম 300 টাকা। এর থেকে ছোট সাইজের দাম 200 টাকা। এর থেকে আরো ছোট সাইজের দাম ১০০ টাকা। বালিশ মিষ্টির সাথে মালাই দেয়া হয়, অসাধারণ স্বাদ। অনেক মনে করতে পারেন বালিশ মিষ্টি মনে হয় সাধারণ মিষ্টির মতই। আসলে সেটা না, এর স্বাদ খুবই চমৎকার এবং সুস্বাদু। আমার বাসায় ৩০০ টাকার বড় একটা নিয়ে গিয়েছিলাম। আমার বাচ্চারাই সব সাবাড় করে দিল। আমি ভাগে যা সামান্য একটু খেয়েছি, তাতেই আফসোস হয়েছে আরও কেন আনালাম না। ইচ্ছা আছে সামনে নেত্রকোনা গেলে, আরো বেশি পরিমানে বালিশ মিষ্টি নিয়ে আসব। নেত্রকোনা শহরে আসলে অবশ্যই অবশ্যই বালিশ মিষ্টি ট্রাই করবেন।
![](https://zamantalk.com/wp-content/uploads/2019/07/Ucitpur_17.jpg)
![](https://zamantalk.com/wp-content/uploads/2019/07/Ucitpur_19_Balis-Misti.jpg)
এছাড়া এখানে আরও বিভিন্ন ধরনের মিষ্টির আইটেম আছে। আমরা হটেলে সর মালাই খেয়েছিলাম। দাম প্রতি পিস ৫০ টাকা। অনেক মজার ছিল। আরও অনেক ধরনের মিস্টি ছিল। কিন্তু পেটে জায়গা না থাকাতে, সেগুলো টেস্ট করতে পারিনি।
![](https://zamantalk.com/wp-content/uploads/2019/07/Ucitpur_16.jpg)
এর পরে আমরা শহরে আরও একটু ঘোরাঘুরি করলাম। নেত্রকোনা জেলায় যেহেতু অনেক হাওড় বাওড় আছে, তাই বর্ষা কালে এখানে, প্রচুর তাজা মাছ পাওয়া যায় সস্তায়। যদি আপনি আশপাশের জেলা থেকে আসেন, তবে আমি বলব চেষ্টা করবেন, এখান থেকে মাছ কিনে নিয়ে যাওয়ার। বিশেষ করে সকালে আসলে তাজা ছোট মাছ পাওয়া যায়। বিকালেও তাজা মাছ পাওয়া যায়। আমি যখন মার্কেটিং এর জব করতাম, নেত্রকোনা আসলেই আমি মাছ কিনতাম। আজকে কপাল খারাপ ছিল, ভালো মাছ পাইনি, এজন্য কেনা হয়নি। সামনে কোন এক সময় আবার আসলে অবশ্যই মাছ কিনে নিয়ে যাবে। নেত্রকোনাতে দেখার মত আরও অনেক জায়গা আছে। বিশেষ করে দুর্গাপুর, বিরিশিরি সহ আরও অনেক জায়গা। ইচ্ছা আছে এসব জায়গায় এই বছরই ভ্রমন করার।
যা হোক আমরা সন্ধ্যার সময় টিকিট কেটে রাত্র ৯ টায় ময়মনসিংহ ফিরে আসি। ইচ্ছা আছে খুব শীঘ্রই আবার বেড়িয়ে পরার। এই ছিল আমাদের মিনি কক্সবাজারের ভ্রমণ কাহিনী।
সবাই ভালো থাকবেন!
ধন্যবাদ