ফ্রিলান্সারের সাফল্যের কাহিনী-০২ঃ ফ্রিল্যান্সিং এর টাকায় গাড়ি

এর আগেও অনলাইন ফ্রিলান্সারের সাফল্যের উপর পোস্ট দিয়েছি। অনেক সফল ফ্রিলান্সারের গল্প জানি। যেহেতু তাদের সাথে আমার নিয়মিত যোগাযোগ হয়। ইচ্ছা ছিল এটা নিয়ে সিরিজ করার। কিন্তু অধিকাংশ ফ্রিলান্সারই পরিচয় প্রকাশ করতে চান না। কারন পোস্ট দেয়ার পর পরই সবাই নক দেয়া শুরু করে। ফলে বেচারার অবস্থা কি হয় বলাই বাহুল্য। তাই পরিচয় গোপন রেখে আরও একজন ফ্রিলান্সারের সাফল্যের কাহিনী বলছি। তিনি এই গ্রুপেই আছেন। গল্প বিশ্বাস করা না করা আপনার ইচ্ছা।

তিনি একজন লোগো ডিজাইনার। একজন জাত যোদ্ধা। যোদ্ধা বলছি এই কারনে যে, তিনি মূলত লোগো কন্টেস্ট বেশি করে্ন। এটাই তার ভাল লাগা বা ভালবাসার বিষয়। শত শত, অনেক সময় হাজারের উপর প্রতিযোগীদের টপকিয়ে, কোন একটা কন্টেস্টে বিজয়ী হওয়া কি রকম কঠিন কাজ, সেটা আমরা জানি। এটা অনেকটা এভারেস্ট বিজয়ের মত বলা যায়। কিন্তু এই কঠিন কাজই তার কাছে পানির মত সহজ। আসলে কাজে মধ্যে মজা পেয়ে গেলে কোন বাঁধাই আর বাঁধা নয়। মুলত ৯৯ ডিজাইন, Freelancer.comdesignhill.comcrowdsite.com এর মত প্রতিষ্ঠিত সাইটে তিনি লোগো কন্টেস্ট করে থাকেন। আর পাশাপাশি Fiverr.com ত আছে। তার উল্লেখযোগ্য সাফল্য বলতে designhill.com এর লোগো ক্যাটাগরিতে সপ্তাহ দুই আগে তার ওয়ার্ল্ড রাঙ্কিং ছিল ৭৭তম। বিশ্বের হাজার হাজার অভিজ্ঞ ফ্রিলান্সারের মধ্য থেকে টপ ১০০ জনের মধ্যে থাকা কি রকম গৌরবের সেটা আমরা সবাই জানি। এটা দেশের জন্যও বিরাট গর্বের। বলাই বাহুল্য তার মাসিক ইনকাম লাখ টাকার উপরে  অনেক সময় আরও বেশি আসে 

এবার আসি তার সাফল্যের প্রসঙ্গে। আসলে টাকা কখনো সাফল্যের মানদণ্ড হতে পারে না। কিন্তু আমাদের মত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কাছে, সামান্য কিছু টাকা ইনকাম, অনেক বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়। মনে আছি আমি যখন প্রথম চাকরির প্রথম বেতন পেলাম, আমার মা বাবা বিশ্বাস করতে চাইলেন না যে তার ছেলে ইনকাম করেছে। বেতনের সেই সামান্য কিছু টাকা তাদের কাছে অনেক অনেক বড় কিছু ছিল! তিনিও মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির সন্তান। তার বাবা গাড়ি চালক, মানে একজন ড্রাইভার। দীর্ঘদিন ধরে অন্যের অধীনে চাকরি করতেন। তার সামান্য আয় দিয়েই সংসার চলত। গত বছর থেকে সেই চাকরি বাদ দিয়েছেন। এবার আসল কথা খুলে বলি।

তিনি গত বছর ৫০% ডাউন পেমেন্টে তার বাবাকে লেটেস্ট মডেলের টয়োটা Hiace গাড়ি কিনে দিয়েছেন। তাই তার বাবা চাকরি বাদ দিয়ে, ছেলের দেয়া গাড়ি নিজেই চালানো শুরু করেছেন। মানে বাপ বেটা মিলে রেন্ট এ কারের ব্যাবসা শুরু করেছেন। বাবা হিসেবে এটা অনেক গর্বের নিশ্চয়! সেই গাড়ি থেকে ভালই ইনকাম হচ্ছে। এই সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গত মাসে ৫০% ডাউনপমেন্টে আরও একটা Hiace গাড়ি নিয়েছেন। আশা করা যায় এই গাড়ি ভাড়া দিয়েও ভাল ইনকাম হবে। বলা বাহুল্য এই পুরো টাকাই তার ফ্রিলান্সিং থেকে আয় করা। প্রশ্ন আসতে পারে তিনি কেন কিস্তিতে গাড়ি কিনেছেন? যেখানে তিনি নগদেই কিনতে পারতেন। আসলে তার ভাষ্য মতে কিস্তিতে গাড়ি নিলে ইন্সুরেস, ব্যাংক ইত্যাদি থেকে ভাল কিছু সুবিধা পাওয়া যায়। আর ঝুকিও অনেক কমে যায়। পাকা ব্যাবসায়ি বলে কথা 

আসলে তিনি আমাদের জন্য একজন মডেল। এত অল্প বয়সের একটা ছেলে, যার লেখাপড়া শেষ হতে এখনো অনেক দেরি, সে কিনা তার পরিবারের হাল ধরেছে। বাবাকে গাড়ি কিনে দিয়েছে। অন্যের দাসত্ব থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করেছে। অথচ অনেক ফ্যামিলিতে দেখা যায় পড়াশোনা শেষ করে অনেকেই বসে থাকে, কবে বাবা ঘুষ দিয়ে একটা চাকরি জোগাড় করে দেবে। নিজের স্ট্যাটাসে লেখে বাপের হোটেলে খাই  এটা খুবই দুঃখজনক! আশা করি এই সাফল্যের গল্প থেকে আমরা কিছু শিখব। ফ্রিলান্সিং না করি অন্তত অন্য কিছু করে পরিবারকে হেল্প করতে পারি। দেশে কাজের কোন অভাব নেই। নিজের স্বদিচ্ছাই যথেষ্ট! আশা করি বিষয়টা ভেবে দেখবেন!

আমরা সেই ফ্রিলান্সার ভাইয়ের আরও সাফল্য কামনা করি।

সবাই ভাল থাকবেন।

ধন্যবাদ!

Similar Posts