ফ্রিল্যান্সিং এ করোনা ভাইরাসের প্রভাব

 আমি আশা করেছিলাম এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে, কেউ হয়ত বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়ে পোষ্ট দেবেন। কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি, সবাই মনে হয় কাজ নিয়ে খুব ব্যাস্ত। তাই আমার এই ক্ষুদ্র জ্ঞান দিয়েই, এই বিষয়ে আমার ব্যাক্তিগত মতামত জানাচ্ছি।
 
করোনা ভাইরাস নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। গত কয়েক মাস পুরা বিশ্ব এটা নিয়েই ব্যাস্ত আছে। ব্যাবসা বানিজ্যে ধ্বস, শেয়ার বাজারে পতন সহ, পুরা বিশ্ব বলা যায়, একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই পোষ্ট লেখার সময়, বিশ্বের ৪১টা দেশ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। চিনে এই পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার মানুষ মারা গিয়েছে (প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হবে) আক্রান্ত লক্ষাধিক। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া, ইটালি এবং ইরানে এটা খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে। চীনের মত এই সব দেশ গুলোও খুব শীঘ্রই এক ঘরে হয়ে পড়বে। চীন হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ (আন অফিসিয়ালি ১ নম্বর)। বলা যায় পুরা বিশ্বই, চীনের উপর কোন না কোন ভাবে নির্ভর করে আছে। আমাদের বাংলাদেশও এর ব্যাতিক্রম না। বলা যায় আমরা অতিমাত্রায় চীনা পন্যের উপর নির্ভরশীল। চিনের উপর নির্ভরশীল পণ্য গুলোর দাম ইতিমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে। দেশের ইকমারস বিজনেস বলা যায় পুরটাই চীনের উপর নির্ভরশীল। বলা হচ্ছে, আগামী ঈদে ইকমারস বিজনেস প্রায় ৫০% ড্রপ হতে পারে। আসলে এভাবে উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না।
 
১৯১৮ সালের দিকে “স্প্যানিশ ফ্লু” নামে একই ধরনের ভাইরাস পুরা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। বলায় হয়ে থাকে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যত মানুষ মারা গিয়েছিল, তার থেকেও অনেক বেশি মানুষ এই একটা ভাইরাসের কারনে মারা যায়। ধারণা করা হয়, এই সংখ্যা ১০ কোটির উপরে। শুধু মাত্র ভারত উপমহাদেশেই প্রায় চার কোটি মানুষ এতে মারা গিয়েছিল। এই করোনা ভাইরাস সেই “স্প্যানিশ ফ্লু” থেকেও আরও বেশি ভয়ংকর। উন্নত স্বাস্থ্য ব্যাবস্থার কারনে জীবনহানি কম হচ্ছে। তার পরেও, আশংকা করা হচ্ছে এই মহামারি থামাতে না পারল্‌ বিশ্বের মোট জনসখ্যার ৩০%-৪০% মানুষ মারা যেতে পারে। আর বাংলাদেশে মত চরম বিশৃঙ্খল স্বাস্থ্য ব্যাবস্থার দেশে, এই ভাইরাস আক্রমন শুরু করলে, কি হবে সেটা ভাবতেই শিউরে উঠি! আশার কথা হচ্ছে এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিস্কার হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। আশা করি সোয়াইন ফ্রু এর মত, এটাও দ্রুত নিয়ন্ত্রনে আসবে। আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।
 
এখন প্রশ্ন আসছে ফ্রিল্যান্সিংএ করোনা ভাইরাসের কি প্রভাব পড়তে পারে। বিষয়টা খুবই স্বাভাবিক। ফ্রিল্যান্সিং বিশ্ব বানিজ্যের ইকসিস্টেমের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কাজেই ফ্রিল্যান্সিংও কম বেশি আক্রান্ত হবে এটাই স্বাভাবিক এবং ইতিমধ্যে এর প্রভাব বেশ ভাল করেই টের পাওয়া যাচ্ছে। মার্কেটপ্লেস গুলোতে কাজ অনেক কমে গেছে। বিশেষ করে যে সব সেক্টরগুলো ইকমার্সের সাথে রিলেটেড। ব্যাক্তিগত ভাবে আমি ইকমার্স ের ইমেজ এবং গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ করি। আমার বেশির ভাগ বায়ার, চীন থেকে পণ্য আমদানি করে। আমার কাজ প্রায় ৭৫% এর মত ড্রপ করেছে। বেশির ভাগ বায়ার হাত পা গুটিয়ে বসে আছে। বড় দিন এবং নিউ ইয়ারের ছুটির পরে, বেশির ভাগ বায়ার কাজ শুরুই করেনি। কারন গত ডিসেম্বর মাস থেকেই করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। এভাবে চলতে থাকলে, আস্তে আস্তে অন্যান্য ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরগুলোর কাজও ধীরে ধীরে কমা শুরু করবে। ব্যাক্তিগত ভাবে, আমার কাজ বাড়ানোর জন্য কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলাম কিন্তু সব গুলোই করুন ভাবে বার্থ হয়েছে। সব মিলিয়ে অবস্থা খুব একটা ভাল দেখছি না। উপরে যা যা বললাম সেগুলো আমার ব্যাক্তিগত মতামত। আমি জানি না আপনাদের কি অবস্থা। যেভাবে সবাই নিজের প্রোফাইলে এবং গ্রুপে গ্রুপে ইনাকামের স্ক্রিনশট বিলিয়ে বেড়ান, তাতে ধারণা করি আপনাদের অবস্থা আমার মত অতটা করুন না।
 
ফ্রিল্যান্সিংএ করোনা ভাইরাসের প্রভাব নিয়ে কারো কোন ব্যাক্তিগত মত থাকলে বা কোন সমাধান থাকলে জানাতে পারেন। আমরা সবাই উপকৃত হবা। ধৈর্য ধরে পোষ্ট পড়ার জন্য, সবাইকে ধন্যবাদ!

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *