The New Maharajas এবং আমাদের ফ্রিলান্সিং

গত বছর এক বায়ারের বেশ কিছু কাজ করছিলাম। রেট ভাল ছিল আর প্রফেশনালি কাজ করেছিলাম। কৌতূহল বশত বায়ারের সাইট চেক করেছিলাম আমার কাজ লাইভ দেখার জন্য। আর যা দেখেছিলাম সেটা ছিল আমার কল্পনারও বাহিরে। বায়ার আমার করা কাজ দিয়েই হাজার হাজার ডলার ইনকাম করছে। সাইটের অবস্থা রমরমা! দেখে ভাল লাগলেও অনেকটা আফসোসও লাগছিল 🙁 মনে হচ্ছিল সারাজীবন কি এভাবে অন্যের জন্য কামলা দিয়েই যাব। নিজের কি এমন কিছু করার নেই 🙁 আর এই বিষয়টা নিয়েই আমার আজকের লেখা।
 
এই ভিডিওটা দেখতে পারেন। পুরোটা দেখার দরকার নেই। প্রথম ০৬ মিনিট দেখলেই হবে। আমি জানি আপনার দেখার সময় হবে না। তাই আমি নিজেই বিস্তারিত বলছি। পাশের দেশ ভারতে নতুন এক সুপার রিচ সম্প্রদায়ের আবির্ভাব হয়েছে। এদেরকে বলা হচ্ছে “The New Maharajas” এদের মধ্যে বেশির ভাগই হচ্ছে আইটি সেক্টরের। জানা কথা, তারা আমাদের থেকে আইটি সেক্টরে অনেক এগিয়ে। গুগল, মাইক্রোসফট ইত্যাদি মত বড় বড় প্রতিষ্ঠানে প্রধান কর্মকর্তা হওয়া এটাই প্রমান করে। আমি সেদিকে যাব না। ভিডিওর গল্পের নায়ক এক শিখ তরুন। বয়স মাত্র ২২ বছর। কিন্তু এই বয়সেই তার মাসিক আয় ১ মিলিয়ন ডলার। মানে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮ কোটি টাকার উপর :O তার টার্গেট বয়স ২৩ হবার আগেই সপ্তাহে ১ মিলিয়ন এবং বয়স ২৫ হবার আগেই দিনে ১ মিলিয়ন ডলার ইনকাম করা। সে কি করে টাকা কামায় সেটা পরে আসছি।
 
বড়লোক হলে যা হয়, সে খুবই সৌখিন, দামি বাড়িতে মা বাবার সাথে থাকে। আর দামি গাড়িতে চলাচল করে বলাই বাহুল্য। হাতের গোল্ড কেসিং আই ফোনের দাম ১০ হাজার পাউণ্ড। ক্রকোডাইল আর পাইথনের দামী চামড়া দিয়ে তৈরি ওয়ালেট ব্যাগ ইত্যাদি ব্যাবহার করে। এটা ইন্ডিয়াতে বেআইনি আর এই ধরণের চামড়ার জিনিস অনেক দামীও বটে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। টাকায় কথা বলে 🙂 বছরের বেশির ভাগ সময় ইউকে, ইউএস ইউরোপে ব্যাবসার কাজে তাকে ব্যাস্ত থাকতে হয়।
 
প্রশ্ন আসছে সে আসলে কি করে। উত্তর হচ্ছে সে একজন আইটি উদ্যোগতা বা এন্টারপ্রেনুয়ার। আরও সোজা বাংলায় যদি বলি, সে মোবাইলের জন্য এপস তৈরি করে। ১২ বছর বয়সে সে প্রথম এপস তৈরি করে। এর পর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তার বাবা তাকে নিয়ে গর্বিত। যে ছেলে লজ্জায় মানুষের সাথে ঠিকমত কথা বলতে পারত না। সে এখন কোটি টাকা ইনকাম করে। তারা পারিবারিক ভাবেই ধনি। কিন্তু সে তার বাবার ব্যবসাতে না যেয়ে স্বাধীন ভাবেই কাজ শুরু করেছে। তার বাবার কারখানার বেজমেন্টে তার অফিস। ইন্ডীয়াতে দক্ষ আইটি প্রকৌশলী খুবই সস্তায় পাওয়া যায়। আর এদের শ্রম কার্যকরী ভাবে ব্যাবহার করেই আজকে সে এত সফল। এই রকম তরুন সফল উদ্যোগতা বিশ্বে লাখ লাখ ছড়িয়ে আছে। গল্প এখানেই শেষ।
 
এবার বাস্তবতায় আসি। আমরা যারা ফ্রিলান্সার, বায়ারের সাথে কাজ করি। আমরা কখনো কি চিন্তা করে দেখেছি যে আমাদের শ্রমের দাম ঠিক মত পাই কিনা। বা পেলেও এই কাজটা আমি কি বায়ারের মত স্বাধীন ভাবে করতে পারতাম না। আমি কি একজন বায়ারের মত উদ্যোগতা হতে পারতাম না। কেন হতে পারলাম না, কিসের ঘাটতি। আর কত দিন মার্কেটপ্লেসের খামখেয়ালী উপর নির্ভর করব। আমরা আসলে কুয়োর ব্যাঙ, মনে করি এটাই জগৎ। এর বাহিরে কিছুই করার নেই। কিন্তু এর বাহিরে বিশাল জগৎ পড়ে আছে। সেটা আমরা হয়ত জানি না। আল্পতেই আমরা সন্তুষ্ট হয়ে যাই। কেন ০৫ বছর ফ্রিলান্সিং করে গর্বের সাথে পরিচয় দেই যে আমি একজন ফ্রিলান্সার। কেন একজন উদ্যোগতা বা এন্ট্রারপ্রেনুয়ার হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে পারি না। আসলে এর উত্তর খুবই সহজ। আমরা আমাদের নিজেদেরকেই শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রাখি। মনে করি এর বাহিরে আমার করার কিছুই নেই। এই বৃত্ত ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে হবে। না হলে এভাবেই চলতে থাকবে। আশার কথা হচ্ছে ইতিমধ্যেই আমাদের দেশে বেশ কিছু আইটি স্টার্টআপ শুরু হয়েছে। তারা অনেকই ভাল করছে। সফল আইটি উদ্যোগতা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ ছড়িয়ে আছে। আমরাই বা কেন পিছিয়ে থাকবে। যারা ফ্রিলান্সিং এ অনেক দিন ধরে আছেন এবং ভাল অভিজ্ঞতা হয়েছে আমি বলব এখনই সময় নতুন করে কিছু শুরু করার।
 
সবাই ভাল থাকবেন।
 
ধন্যবাদ!
 
(অনেকেই হয়ত প্রশ্ন করবেন, এত লম্বা অম্বা ডায়লগ দিলেন, তা মিয়া আপনি কি করছেন? উত্তর হচ্ছে আমিও শুরু করে দিয়েছি, যদিও খুব একটা সুবিধা করতে পারছি না 🙁 কিন্তু লেগে আছি। পথে নামলে পথই পথ দেখায়। মাত্র পথে নেমেছি। হায়ত সামনে ভাল কিছু হবে। সবার দোয়া চাইছি)

Similar Posts

One Comment

  1. আপনি এখানে ফেসবুক কমেন্ট এড করতে পারেন, তাহলে ফেসবুকে লগইন থাকলে সহজে কমেন্ট করা যাবে। তখন আর নাম, ই-মেইল লেখার প্রয়োজন হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *