যাকাত বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা এবং কিছু কথা

যাকাত বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা এবং কিছু কথাঃ
 
আমার লেখা যারা ফলো করেন সবাই জানেন আমি দুইটা বিষয় সযত্নে এড়িয়ে চলি এক হচ্ছে ধর্ম এবং দুই হচ্ছে রাজনীতি। তবে আজকে যে বিষয় নিয়ে আলাপ করব সেটা কিছুটা ধর্মীয় হলেও অনেক বেশি প্র্যাক্টিক্যাল এবং সামাজিক বিষয়। তাই ভাবলাম এর উপর কিছু লিখি।
 
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি হচ্ছে যাকাত। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় হচ্ছে অন্যান্য আমলের ব্যাপারে আমরা যতটা যত্নশীল, যাকাতের ব্যাপারে ততটাই উদাসীন :'( যেহতু এখানে টাকা পয়সার ব্যাপার আছে তাই সবাই চাই এড়িয়ে যেতে। অনেকেই মনে করেন এটা বড়লোকদের ব্যাপার, আমি গরিব আমার অত টাকা পয়সা নেই। আর এমনিতেই ত অনেক দান করি। এতেই যাকাত আদায় হয়ে যায়। বিষয়টি আসলে টা নয়, যাকাত কিন্তু দান নয়, যাকাত হচ্ছে ফরজ। অর্থাৎ এটা ঐচ্ছিক নয়, সামর্থ্য থাকলে যাকাত দিতেই হবে। নিজের প্রয়োজন মেটানোর পর বর্তমান হিসাবে ৮৫ গ্রাম সোনা বা ৫৯৫ গ্রাম রূপা বা সমপরিমাণ অর্থ (২৫ হাজার টাকা, প্রতি গ্রাম রুপা ৪১ টাকা হিসেবে) এক চান্দ্র বছর জমা থাকলে প্রত্যেক সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের ওপর যাকাত ফরজ।
 
এক কথায় বছর শেষে আপনার কাছে সোনা-রূপা, টাকাপয়সা, সঞ্চয়পত্র সব মিলিয়ে যদি ২৫ হাজার টাকার সম্পদ থাকলে, আপনার উপর যাকাত ফরজ হবে। (এক্ষেত্রে রূপাকে ষ্ট্যাণ্ডার্ড ধরা হয়েছে, অনেকেই সোনাকে ষ্ট্যাণ্ডার্ড ধরেন) এটা নিয়ে কিছুটা মত বিরোধ আছে। চেষ্টা করতে হবে যাকাত দাতা হবার, এরাবার চেষ্টা করা উচিৎ না। ভাল হয় কোন বিজ্ঞ আলেমের সাথে আলাপ করে নিলে। যাকাত যেহেতু ফরজ, তাই সঠিকভাবে যাকাত আদায় না করলে পুরো সম্পদই আপনার জন্যে হারাম হয়ে যাবে। আর যাকাত দিলে সম্পদ হালাল হওয়ার পাশাপাশি তা বাড়তেই থাকবে। আমি নিজে এর প্রমান পেয়েছি। তাই যাকাতদাতা হওয়ার সুযোগ আনন্দিতচিত্তে গ্রহণ করুন এবং দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে সঙ্ঘবদ্ধভাবে যাকাত আদায় করুন। আপনার সম্পদ ক্রমাগত বাড়তে থাকবে।
 
জাতি হিসেবে আমাদের মন অনেক নরম এবং উদার। আমরা কিন্তু যথেষ্ট দান খয়রাত করি। তার প্রমান, এই ঢাকা শহরেই প্রতি মাসে কয়েকশ কোটি টাকার দানের টাকা ওঠে। এটা নিয়ে রীতিমত সিন্ডিকেট ব্যাবসা গড়ে উঠেছে। অনেকেই শহরে ভিক্ষা করে গ্রামে বাড়ি জমি জমা করেছে। যেহেতু গ্রামে থাকি তাই এসব ভাল জানি। আর মাজারের ব্যাপারে যত কম বলা যায় তত ভাল। মাজার দিয়ে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যাবসা হাচ্ছে। মনে রাখতে হবে যাকাত আগে আদায় করতে হবে, এর পরে আপনি ইচ্ছা মত দান খয়রাত করতে পারবেন, সেটা ঐচ্ছিক ব্যাপার। আগেই বলেছি যাকাতের ব্যাপারে আমরা চরম উদাসীন এবং আমি অনেকের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলেছি, এবং দেখেছি বেশিরভাগই হিসেব করে যাকাত দেন না। মনে করেন দান খয়রাত করেন এতেই যাকাত হয়ে যাচ্ছে। যাকাত কিন্তু হিসেব করে দিতে হবে। না হলে যাকাত আদায় হবে না। আশার কথা হচ্ছে অনেকেই এখন যাকাতের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এবং যাকাত আদায় করছে। আর রমজান মাস শুরু হচ্ছে, কেনা জানে রমজানে সব কিছুর বরকত ৭০ গুন বাড়ে। কাজেই এই মাসে যাকাত আদায়ের জন্য সব থেকে উত্তম।
 
এবার নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। আমি যাকাত দেয়া শুরু করি ২০১৫ সালে এর আগে যাকাত দেয়ার যোগ্যতা ছিল না বা বলা যায় সচেতন ছিলাম না। চেষ্টা করি আমার কাছের সবাইকে যাকাত দানে উদ্বুদ্ধ করার। আমার মা, ভাই, শ্বশুর সবাই এখন যাকাত দাতা, আলহামদুলিল্লহ! অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে যাকাত আদায় করার পরেও, প্রতি বছরই আমার যাকাত দেয়ার পরিমান বাড়ছে। আমার পরিচিত যারা নিয়মিত হিসেব করে যাকাত দেন, সবারই যাকাতের পরিমান বাড়ছে। মানে সম্পদের পরিমান বাড়ছে। কাজেই যারা ভাবছেন যাকাত দিলে সম্পদ কমে যাবে, তারা ভুলের মধ্যে আছেন। যাকাত দিলে সম্পদ বাড়ে, স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এর ওয়াদা করেছেন। কাজেই আমি বলব এখনই সময় সচেতন হবার। খাতা কলম নিয়ে রেডি হয়ে যান, হিসাব শুরু করে দেন। চাইলে এই যাকাত ক্যালকুলেটর ইউজ করতে পারেন! যাকাতের ব্যাপারে আরও জানতে এই লিফলেট নামিয়ে পড়তে পারেন।

 

ধর্মীয় ব্যাপারে আমার জ্ঞান একেবারেই সীমিত, তার পরেও যত টুকু জানি যাকাতের ব্যাপারে, সেগুলো শেয়ার করছি।

১. নিজের প্রয়োজন মেটানোর পর বর্তমান হিসাবে ৮৫ গ্রাম সোনা বা ৫৯৫ গ্রাম রূপা বা সমপরিমাণ অর্থ (৭৪ হাজার টাকা) এক চান্দ্র বছর জমা থাকলে প্রত্যেক সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের ওপর যাকাত ফরজ। স্থাবর সম্পত্তি যেমন জমি জমা, ঘর বাড়ি এসবের জাকাত দিতে হয় না।

২. যাকাত যোগ্য সম্পদের মাত্র ২.৫% জাকাত হিসেবে দিতে হয়। অর্থাৎ আপনার কাছে ১ লক্ষ টাকার সম্পদ থাকলে মাত্র আড়াই হাজার টাকা জাকাত দিতে হবে। বলা যায় অর্থ সামাজিক উন্নয়ন হওয়াতে আমাদের দেশের বেশিরভাগ লোকই এখন যাকাত দেয়ার উপযুক্ত। চাই শুধু একটু সচেতনতা।

৩. মসজিদ মাদ্রাসায় জাকাতের টাকা দেয়া যায় না। তবে কোন মাদ্রাসা বা এতিম খানায় যদি “গোরাবা ফান্ড থাকে” অর্থাৎ যে ফান্ডের টাকা থেকে এতিম অসহায়দের খাবারের ব্যাবস্থা করা হয় তবে সেখানে যাকাতের টাকা দিতে পারেন।

৪. জাকাতের জন্য আপনার গরিব আত্মীয় স্বজনদের হক সবার আগে। বিশেষ করে যদি অসহায় ঋণগ্রস্থ হয়।

৫. জাকাতের টাকা খুদ্র খুদ্র ভাগে ভাগে না দিয়ে একসাথে দিলে বেশি ভাল। কারন যাকাতের প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে দারিদ্র বিমোচন করা। যেমন ধরে নেই আপনি ২৫ হাজার টাকা যাকাত আদায় করবেন। এখন এই টাকা দিয়ে লুঙ্গী শাড়ি না বিতরণ করে কয়েকজন দুঃস্থ অসহায় মহিলাকে সেলাই মেশিন কিনে দিতে পারেন। বা কাউকে রিক্সা ভ্যান কিনে দিতে পারেন। দেখবেন এটা দিয়েই সে হয়ত দারিদ্রতা থেকে মুক্ত হতে পারে এমনকি একদিন নিজেই যাকাত দাতা হবে।

৬. সোনা রুপার অলঙ্কারের যাকাত দিতে হবে। মা বোনেরা এই ব্যাপারে সব থেকে বেশি উদাসীন। মনে রাখতে হবে আপনার ইনকাম না থকালেও, অলঙ্কারের কিছু অংশ বিক্রি করে হলেও যাকাত আদায় করতে হবে। না হলে পাপের ভাগিদার হবেন।

যাকাতের ব্যাপারে আরও জানতে পরিচিত কোন হক্কানি আলেমের পরামর্শ নিন। ইউটিউবে প্রচুর ভিডিও আছে এর উপর!

মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে যাকাত দাতা হবার তৌফিক দান করুন!

আমিন!

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *