ফ্রিলান্সারের সাফল্যের গোপন রহস্য!

এই সত্যি গল্পটা আমি অনেককে বহুবার বলেছি, সুযোগ পেলেই বলি এবং আপনারা চাইলেও অন্যদের অনুপ্রানিত করার জন্য বলতে পারেন। গল্পটা শুরু করা যাক।
 
এটা এক কানভাসারের গল্প। তার বাড়ি উত্তরাঞ্চলে। ক্যানভাসারদের আমরা ভাল করেই চিনি। যারা বাসে, ট্রেন, লঞ্চে, গ্রাম গঞ্জের হাটে, ফুটপাতে দাড়িয়ে বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে। এমন সব জিনিস যেগুলো সহজেই পাওয়া যায়, তার পরেও তাদের কাছ থেকে কিনি। কিনি কারন তাদের কথায় যাদু আছে। সেই ক্যানভাসার অনেক দূরে দক্ষিণাঞ্চলে, তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছে। বেশ কয়েকদিন ঘোরাঘুরি আর মজা করে, ফেরার সময় তার হাতের সব টাকা ফুরিয়ে গেল। যেহেতু তার আত্মসম্মানবোধ অনেক প্রবল, তাই সে আত্মীয়ের কাছে টাকার জন্য হাত পাতল না। ভোঁরে ট্রেনষ্টেশনে এসেছে বাড়ি ফেরার জন্য। পকেট তার গড়ের মাঠ। মানে একেবারেই ফাঁকা 🙂 কি করা যায় চিন্তা করতে লাগল। হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি এল। রাস্তায় একটা পুরাতন ব্লেড খুঁজে পেল। সেটা নিয়েই রেললাইনের ধারে চলে গেল। রেললাইনের পাশে অনেক ধরনের গাছ হয়, যেগুলো সচারচর অন্য জায়গায় পাওয়া যায় না। তার মধ্যে অনেক দরকারি ওষুধি গাছও থাকে। সেই ক্যানভাসারের ওষুধি গাছ সম্পর্কে ভাল ধারনা ছিল, কারন এগুলো সে গ্রামের হাটে অনেক বিক্রি করেছে। সেই ব্লেড দিয়ে ওষুধি গাছ কাটা শুরু করল।
 
অনেক ধরনের ওষুধি গাছ সংগ্রহ হল এবার বিক্রির পালা 🙂 সে রাস্তার ধারে কুড়িয়ে পাওয়া পেপার বিছিয়ে, ইট দিয়ে চার কোনায় চাপা দিল। এর পরে ওষুধি গাছ গুলো মাপমত কেটে, পেপারের উপর সুন্দর করে সাজাল। এক দিকে শিকড়, এক দিকে পাতা, এক দিকে কান্ড। অভিজ্ঞ বলে কথা 🙂 এবার তার কানভাসিং শুরু হল। কথায় আছে ক্যানভাসারের লক্ষ্মী মুখে আর ফকিরের লক্ষ্মী পায়ে 🙂 এই দুইটা যত বেশি ব্যবহার হবে, তত বেশি তাদের ইনকাম হবে 🙂 ক্যানভাসার ভাই অভিজ্ঞ, তার মুখের কথায় মজে গিয়ে আম জনতা পাগলের মত তার ওষুধি গাছ, লতাপাতা কিনতে লাগল 🙂 দেখতে দেখতে সব শেষ। অবস্থা এমন যে, পরের সপ্তাহে সে আবার এখানে আসবে এই কথা বলে পাবলিককে শান্ত করতে হল 🙂 অনেক পরিশ্রম হল। অনেক খিদে পেয়েছে, এবার নাস্তা করতে হবে। ষ্টেশনের সব থেকে ভাল হোটেলে, খাসির গোস্ত আর পরোটা দিয়ে ভরপেট নাস্তা করল 🙂 আয়েশ করে সিগারেট টানতে টানতে তার বাকি টাকা গুনতে লাগল। দেখল ট্রেনের টিকেট কাটার পরও তার হাতে আরও কিছু টাকা থাকবে খরচের জন্য। টিকেট কেটে ট্রেনে চেপে বসল। আয়েশ করে বাড়িতে পৌঁছে গেল।
 
এখন এই গল্প থেকে আমরা কি শিখলাম।আসলে একজন মানুষের যদি স্কিল থাকে তবে তাকে কেউ আটকে রাখতে পারে না। যেমন এই ক্যানভাসারকে কোন বাঁধাই আটকে রাখতে পারেনি। সব বাঁধা পেরিয়ে সে সামনে এগিয়ে গিয়েছে। ঠিক তেমনি ভাবে একজন ফ্রিলান্সারের সাফল্যের মুল রহস্য হচ্ছে তার স্ক্রিল। নিদিষ্ট বিষয়ে ভাল স্কিল আছে আর বেকার বসে আছে এমন কাউকে আমি অন্তুত দেখিনি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে এই স্কিল ডেভেলপমেন্টের ব্যাপারে আমরা সব থেকে বেশি উদাসীন। বিশেষ করে নতুনদের এই ব্যাপারে সব থেকে বেশি উদাসীনতা দেখা যায়। কোন রকমে কাজ শিখেই আমারা নেমে পড়ি। ফলে সফল হবার সম্ভবনা এমনিতেই কমে যায়। আর এদিক সেদিক ঘুরে ব্যর্থ হয়ে মার্কেটপ্লেসের দোষ দিয়ে বিদায় নেই। অথচ আমরা জানি দক্ষ ফ্রিলান্সারের কি চাহিদা 🙁 আমার সাথে প্রচুর মানুষের কথা হয়। আফসোস হচ্ছে স্কিল ডেভেলপমেন্টের ব্যাপারে কাউকে কিছু বলতে শুনি না। সবাই খালি ডলার ইনকামের কথা বলে। অথচ স্কিল থাকলে ডলার পিছনে আঠার মত লেগে থাকবে।
 
এক ছোট ভাইয়ের গল্প দিয়ে লেখা শেষ করব। প্রায় দুই বছর আগে তার সাথে শেষ কথা হয়েছিল। প্রায় ০২ বছর সময় দিয়ে ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট শিখেছিল। শিখেছিল মানে বেশ ভাল স্কিল ডেভেলপ করেছিল। Upwork এ একজন বায়ারের সাথে বেশ কিছু কাজ করছিল। দুঃখজনক ভাবে তার পিসি নষ্ট হয়ে যায়। বায়ার নতুন কাজ দিতে চাইলে, সে তার অপারগতা জানায়। কারন জিজ্ঞেস করলে বলে, তার পিসিতে সমস্যা। বায়ার সাথে সাথে তাকে পিসি কেনার জন্য ডলার পাঠিয়ে দেয়। সুধু তাই না। বায়ারের নিজের ম্যাকবুক তাকে পরে গিফট করে দেয়। কারন বায়ার অভিজ্ঞ, সে রত্ন ঠিকই চিনেছিল। তাই তাকে সে কোন মতেই হাতছাড়া করতে চাচ্ছিল না। আর স্কিলই সেই বাচ্চা একটা ছেলেকে হীরের টুকরোয় পরিণত করেছিল। এটা প্রায় দুই বছর আগের কথা। সবকিছু ঠিক থাকলে এতদিনে তার সাফল্যের চুড়ায় পৌছার কথা।
 
তাই আমি বলব যতই ব্যাস্ত থাকি, আমাদের কাজের মোট সময়ের অন্তত ১৫% স্কিল ডেভেল্পমেন্টের জন্য ব্যায় করা উচিত। এটা অনেকটা ইনভেস্ট করার মত। দেখবেন এই ছোট ছোট ইনভেস্টমেন্ট একদিন বহুগুণে ফেরত আসবে।
ধন্যবাদ!

Similar Posts

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *