ফ্রিল্যান্সিং এর ভুত ও ভবিষ্যৎ

(আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এটা একটা ডিমোটিভেশনাল লেখা। কাজেই ডিমোটিভেটেড হতে না চাইলে লেখাটা এড়িয়ে যেতে পারেন)
 
আজকে কাছের একজনের Fiverr এর প্রোফাইল খুলতে যেয়ে, সেই লেভেলের একটা অভিজ্ঞতা হল। দেখলাম নিয়ম কানুন অনেক কঠিন হয়ে গেছে। ফেসবুক, এবং গুগল এড করতেই হল। প্রোফাইল ৬৫% না হলে গিগ ওপেন করতে দেবে না। গিগ ওপেন করতে যেয়ে আরেক প্যাঁরা, পাবলিশ করতে যেয়ে বলে, আগে টেস্ট দিতে হবে, না হলে গিগ ড্রাফটে রয়ে যাবে। গুগল শুরু করলাম, কোঁথাও প্রশ্নের উত্তর পাইনা। শেষে ইউটিউবে একটা ভিডিও পেলাম। কিন্তু দেখি অনেক খারাপ রিভিউ, তার পরেও দেখা শুরু করলাম, নাহ এভাবে হবে না। কাগজে প্রশ্ন উত্তর লেখা শুরু করলাম। ৪০ টা প্রশ্ন ০৫ পেজ কাগজে লিখে ফেললাম। ১ ঘণ্টা কষ্ট করে লেখালেখি করে, সব গুছিয়ে নিয়ে আসার পর, ভিডিও শেষে দখি, ভিডিও দাতা পরীক্ষায় ফেল করেছে >:( মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। ব্যাটা তুই ফেল করার ভিডিও কেন দিলি, রাম ছাগল কোথাকার >:(
 
যা হোক নিজের কমনসেন্স খাটিয়ে, আমার সেক্টরের বাহিরের একটা বিষ,য়ে দুইজনে মিলে পরীক্ষা দিলাম। বহু কষ্টে ৬ এর উপর স্কোর করে পাশ করলাম। এর পরে গিগটা পাবলিশ করা গেল। কয়েক ঘন্টা লাগিয়ে এত প্যাঁরা সহ্য করে একটা প্রোফাইল রেডি করতে পারলাম। কষ্ট আর কাকে বলে। কিন্তু এর পরেও এর কোন ভরসা নেই। Fiverr এ যে কারো প্রোফাইল যে কোন সময় চলে যেতে পারে। এবং ভেরিফাই হওয়া প্রফাইল ব্যান হয়ে গেলে, ওই নামে আর জিন্দেগিতে প্রোফাইল খুলতে পারবেন না। ঘটনা শুনেছিলাম, এক বেচারা নিজের একাউণ্ট ব্যান হবার পর, বৌয়ের নামে প্রোফাইল খুলে কাজ করছে । অথচ বউ রান্না করা আর সংসার সামলানো ছাড়া আর কিছু জানে না। সে বাহিরে নিজেকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে পরিচিয়ও দিতে পারে না, প্রমান যে নেই, কি আফসোস। ঘন ঘন এলগোরিদম চেঞ্জ করার কারনে, বেশির ভাগ সেলারের সেলের বারোটা বেজে গেছে। বছর দুই আগেও যেখানে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে অর্ডার পাওয়া যেত, এখন সারা রাত নির্ঘুম থেকেও অর্ডারত দূরে থাক, মেসেজও আসে না। দেশের ৯৯.৯৯% ফ্রিলান্সিং কোচিং সেন্টার এখন Fiverr এর উপর নির্ভরশীল। কাজেই বারোটাত বাজবেই। দিনে দিনে এটা আরও কঠিন হয়ে যাবে। জানেন কিনা জানি না Usa এর শেয়ার বাজারে Fiverr এর শেয়ারের রীতিমত ধ্বস নেমেছে। আর বায়ারও উল্লেখযোগ্য হারে হারিয়েছে। কাজেই নিজেদের রেপুটেশন ধরে রাখতে তারা আরও কঠোর হবে। 
 
ওদিকে সব থেকে প্রফেশনাল মারকেটপ্লেস Upwork এর ১২ টা বেজে গেছে সেই খবর কি রাখেন? কিছুদিন আগে তারা বেশ কিছু আপডেট এনেছে এর উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এখন ফ্রিলান্সারদের বিড করতে গেলে, ডলার দেয়া লাগবে। প্রতি কানেকশন ১৫ সেন্টস। কাজের উপর ভিত্তি করে কানেকশন খরচ করতে হবে। সেদিন একটা ১২৫ ডলারের কাজে বিড করতে যেয়ে, আমার ৬ টা কানেকশন লাগল মানে ৯০ সেন্টস খরচ হল। বিড পড়েছে দেখলাম ৫০টা। মানে বায়ার ১২৫ ডলারে কাউকে হায়ার করার আগেই Upwork এর ইনকাম ৫০x ০.৯০=৪৫ ডলার, ব্যাবসা কারে বলে :O আরও আছে এখন থেকে বায়ারদেরও বেশি টাকা দিয়ে মেম্বারশিপ কিনতে হবে। মাসে ৪৯৯ ডলার খরচ করতে পারলে খুবই ভাল, নিদেন পক্ষে ৪৯ ডলার দিতেই হবে। ফ্রিতে ভাল সার্ভিস পাবেন না। বিশ্বাস না হলে এই লিংকে চলে যান।  শুধু তাই না, মোটের উপরে ৩% চার্জ দিতে হবে। এত প্যাঁরা সহ্য করে বায়ার কেন থাকবে। ফলে দলে দলে বায়ারেরা চলে যাচ্ছে। আমার নিজেরই দুইটা রেগুলার বায়ার চলে গেছে। আরেক জন যাওয়ার পথে। শুনলে অবাক হবেন Upwork এখন Fiverr মত হতে চাইছে। গিগ দেয়ার মত সিস্টেম ইতিমধ্যেই চালু করছে। আসলে তাদের লাল বাত্তি জ্বলতে বেশি দেরি নেই।
 
Freelncer এর অবস্থা অনেক আগে থেকেই লেজে গোবরে। সেখানে গেলে দেখবেন আমাদের দেশের সেলারদের রাম রাজত্ব। কিভাবে কপি পেস্ট করে দেশের রেপুটেশন খারাপ করা যায়, আর একজন আরেকজনকে কিভাবে বাঁশ দেয়া যায় তার নিরন্তর প্রতিযোগিতা চলছে। অন্য ছোট ছোট মার্কেটপ্লেস এর কথা বাদ দিলাম। এখন বলবেন সরাসরি বায়ারের সাথে কাজ করব। ব্যাপারটা আসলে অতটা সহজ নয়। মার্কেটপ্লেস থেকে বায়ার যোগাড় করা, আর সরাসরি বায়ার জোগাড় করা, আকাশ পাতাল পার্থক্য! করতে গেলেই বুঝবেন কত ধানে কত চাল। আমি নিজে বেশ অনেকদিন ধরে চেষ্টা করছি, এবং আমি পুরাপুরি।হতাশ।  হয়ত কেউ কেউ সফল হয়েছেন সরাসরি বায়ার পেতে। তবে তাদের সংখ্যায় একেবারেই নগণ্য।
 
সামনে আসছে আটোমেশন আর মেশিনলার্নিং এর যুগ। অনেক কিছুই আর্টিফিশিয়াল, ইন্টলিজেন্স এর মাধম্যে হয়ে যবে। আমার মত যারা খুব সাধারণ কাজ করে টিকে আছেন, তারা শুরুতেই ছিটকে পড়বেন। যারা হাই স্কিলের কাজ করেন তারা হয়ত টিকে যাবেন। বাকীটা বুঝে নেন। শুনলাম দেশে নাকি ফ্রিলান্সারদের কার্ড দেয়া হবে। ভাল উদ্যোগ, কিন্তু এর আগে পেপাল দরকার সবার আগে। বাস্তবতা হচ্ছে এই দেশে পেপাল আসবে না, কারন সব ব্যাংক মালিকপক্ষ এর বিরুদ্ধে। তাদের ব্যাবসার ক্ষতি নাকি হবে। কাজেই ওটা বাদ দিলাম। বলছিলাম কার্ডের কথা। আচ্ছা কার্ড না থকলে যদি আপনার টাকা ব্যাংক আটকে দেয়, কি করবেন ভেবেছেন? যদি ট্যক্স দেয়া লাগে কি করবেন? ওসব বাদ দিন, ৬ লাখ ফ্রিলান্সারকে কার্ড দিতে যদি ১০০০ হাজার করেও নেয়, তবে ৬০ কোটি টাকার মামলা 🙂 যা হোক সেদিকে আর গেলাম না। আদার ব্যাপারির জাহাজের খবর নিয়ে লাভ নেই। আমার মতে কার্ড যদি দিতেই হয় ফ্রিতে দেয়া হোক এবং কি কি সুবিধা দেয়া হবে তা ভাল করে ক্লিয়ার করা হোক। এমনিতেই মার্কেটপ্লেস ২০% সার্ভিস চার্জ কেটে নেয়। আর কত হিডেন চার্জ আছে। আমার কি ভাই দুধেল গাঁই যে ইচ্ছামত দুধ দুইয়ে নেবেন। আমাদের জন্য প্রকৃত অর্থেই কিছু করুন।
 
সব দিক মিলিয়ে ফ্রিলান্সিং এর ভুত ও ভবিষ্যৎ আমার কাছে, খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছে না। আমরা যারা প্রকৃত ফ্রিলনসিং করি তারা মুলত কোন সাহায্য ছাড়াই একক প্রচেষ্টায় টিকে আছি। কিন্তু সমাজ আর রাষ্ট্র যদি এগিয়ে না আসে, তবে আমাদের টিকে থাকা সমনে কঠিন হয়ে যাবে। সঠিক পরিকল্পনা এবং এর বাস্তবায়ন এই সেক্টরকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পার। সেই দিনের অপেক্ষায় রইলাম।
 
ধন্যবাদ!
 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *