বায়ার গট High

নিচের স্ক্রিনসট লক্ষ্য করুন। এটা আমার ফিলান্সিং লাইফের সব থেকে বড় অর্ডার। তাও প্রায় দুই বছর আগের। আমার বেশির ভাগ অর্ডার ৫/১০ ডলারের। কালে ভদ্রে একটু বড় অর্ডার পাই। সেই সময় এই অর্ডার পেয়ে কি রকম অবাক হয়েছিলাম সেটা কিভাবে বুঝাই  

তখন অর্ডার অনেক কম আসছিল আর কিছুটা আর্থিক সমস্যায় ছিলাম। সেই কঠিন সময়ে এই বড় অর্ডার, চৈত্রের খরতাপে বৃষ্টির মত হয়ে এসেছিল। আমি এতটাই পুলকিত হয়েছিলাম যে এটার স্ক্রিনশট রেখে দিয়েছি। অর্ডার না পেয়ে মন খারাপ থাকলে মাঝে মাঝে দেখি   মন ভাল হয়ে যায়।

অনেকেই ভাবছেন মনে হয় এটা অনেক বড় কাজ ছিল। ব্যাপারটা মোটেও তেমন নয়। খুবই সাধারন ১৫টা ছবির কাজ ছিল। ৩০ মিনিটেই শেষ করি, সাথে সাথে ডেলিভারি দেই, ভয়ে ভয়ে ছিলাম যদি অর্ডার কান্সেল করে। কিন্তু বায়ার এতটাই খুশি যে ৯০ ডলার টিপস দিয়ে দিল। মানে ১৫ টা ছবিতে আমার ইনকাম ছিল প্রায় ২০ হাজার টাকা মাসের ইনকাম এক ঘণ্টায়।

এর থেকে আরও অবাক করা ঘটনা বলি। গ্রুপের এক ভাই তার অভিজ্ঞতা আমাকে বলেছিল। বায়ার তাকে নক করে বলে, তার কাছে ১১ টা ছবির কাজ আছে। তার বাজেট ২০০ ডলার। সেই ভাই মনে করল যে বায়ার মনে হয় মজা করছে। তাই সেও উত্তের বলল ছবি প্রতি ২০০ ডলার হিসেবে ১১টা ছবি ২২০০ ডলার। বায়ার বলল তার বাজেট সীমিত ১৮০০ ডলারে করে দিতে পারবে কিনা। সে সাথে সাথে অফার পাঠাল। খুবই ইজি কাজ, কাজ দ্রুত ডেলিভারি দিয়ে দিল। বায়ার ০৫ স্টার ফিডব্যাক দিয়ে চলে গেল  

এসব ঘটনা দেখে কি মনে হয় আপনাদের? ইংরেজিতে একটা কথা আছে সেটা হচ্ছে “High” খাঁটি বাংলায় যাকে বলে পিনিক। মানে নেশাকারি নেশা করার পর একটা চরম পুলক অবস্থা! এই অবস্থায় নেশা কারীর মন অনেক ভাল থাকে। এই সময় সে তার সবকিছু দিয়ে দিতে পারে  আমার মনে হয় বায়ারগুলো এই সময় সেই অবস্থায় ছিল। না হলে এই ধরনের অর্ডার কি করে করতে পারে। ১০ ডলারের কাজ কিভাবে শত বা হাজারে হয়। এই নেশার বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হেসে উড়িয়ে দেবেন না। আমেরিকার অনেক রাজ্যে এখন গাঁজা বৈধ। হতে পারে বায়ার গাঁজা টানতে টানতে বব মারলির বিখ্যাত গাঞ্জা গান গানটি শুনছে (জাস্ট মজা করলাম)

 

আবার বিপরীতও হতে পারে। কত পরশু একটা অর্ডার পেলাম। ইউকে বায়ার, কাজ ডেলিভারি দেয়ার পর অনেকবার রিভিশন চাইল। আর প্রতি রিভিশনেই আমাকে যা তা বলে বকাবকি করতে লাগল। এমনকি আমাকে থ্রেট দিল সে Fiverr এ রিপোর্ট করবে। আমিও ভদ্র ভাষায় কয়েকটা কড়া কথা বললাম। তাকে অর্ডার কান্সেল করতে বললাম। মাথায় রক্ত চড়ে গেল   বাথরুমে যেয়ে মাথায় পানি দিয়ে এলা্লাম। মাথাটা ঠাণ্ডা হলে তাকে বললাম, আরেকবার সুযোগ দিতে। সে শেষ বারের মত আমাকে সুযোগ দিতে রাজি হল। কাজ ভাল না হলে কপালে খারাবি আছে বলে থ্রেট দিল। আমি তার ফাইল ফেলে রেখে দিলাম। ভোঁরে ঘুমাতে যাবার আগের প্রায় সেইম ফাইল আবার পাঠালাম, আসলে কিছুই করার ছিল না। ধরেই নিয়েছি কপালে খারাপ কিছু আছে। ওমা সকালে উঠে দেখি বায়ার আমার কাজে অনেক খুশি। বিরাট একটা রিভিউ দিয়েছে। আমার মত সেলার নাকি হয় না। বুজলাম রাতে বায়ার আমার High ছিল 

বিদেশে পরিবার ব্যাবস্থা প্রায় উঠে যাচ্ছে। বেশিরভাগ মানুষ একা থাকে। প্রাই সময় ডিপ্রেশনে থাকে। সেখানে বারের কোন অভাব নেই। ঘরেও নেশা পানির ব্যাবস্থা আছে। আমাদের বায়ারেরাও মানুষ, তারাও এসবের উর্ধ্বে নয়। তাই কোন বায়ার যদি এই ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ করে তবে মাথা ঠাণ্ডা রাখেন। মেসেজের রিপ্লাই সাথে সাথে দেবেন না, সময় নেন, বায়ারের মাথা ঠিক হলে আবার আলাপ করেন। আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে। আর বায়ার যদি খুশি মনে কিছু দেয়ই, তবে সেটা দুহাত ভরে নিয়ে নেন, যেমনটা আমি নিয়েছি 

সবাই ভাল থাকবেন!

ধনবাদ!

Similar Posts