একটি মজার গল্প এবং ফ্রিল্যন্সিং টেনিং সেন্টার
একজনের কাছ থেকে ফ্রিলান্সিং নিয়ে মজার একটা ঘটনা শুনেছিলাম । ঘটনাটা বলার আগে আরেকটা মজার গল্প বলি।
অনেক অনেক দিন আগের কথা। এক মাজারের খাদেম তার মোতাওয়ালি-কে বললো যে, সে হজ্জে যাবে। অনুমতি পেয়ে খাদেম ঘোড়ায় চড়ে আরব দেশের উদ্দেশ্যে রওনা করল। কয়েক দিন একটানা চলতে চলতে, হঠাৎ ঘোড়াটা মারা গেল।কি করবে কোন উপায় না দেখে, খাদেম ঘোড়াটিকে পথে কবর দিয়ে বসে কাঁদতে লাগলো। পথচারীরা কবর এবং খাদেমের কান্না দেখে, যাওয়ার পথে টাকা দিতে লাগলো। খাদেম বুদ্ধি করে ঘোড়ার কবরের উপর লালসালু কাপড় দিল আর সাথে কিছু মোমবাতি জ্বালিয়ে দিল। আস্তে আস্তে তার ব্যাবসা তার বাড়তে থাকল। এভাবে কবরটি এক সময় এক বড় মাজারে পরিণত হলো। খাদেম হয়ে গেল মাজারের মোতাওয়ালি। মাজারের টাকায় সে আরাম আয়েসে দিন পার করতে লাগল।
ওদিকে অনেকদিন অপেক্ষা করে, খাদেমের সন্ধানে বের হলেন তার হুজুর। কয়েক দিন পর পথিমধ্যে মাজারসহ শিষ্যকে আবিষ্কার করলেন। হুজুর জিজ্ঞেস করলেন, এটা কার কবর? শিষ্য বললো, হুজুর, এটা আপনার দেয়া ঘোড়ার কবর। জমজমাট মাজার দেখে খুশি হয়ে হুজুর বললেন, ঘোড়ার জাতটা খুব ভালো। এটার মা ঘোড়াটি দিয়েই তো আমি আমার মাজারটা করেছি। আর সে জন্যেই নাম ঘোড়াশাহ পীরের মাজার।
(পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের ‘বাঙালির হাসির গল্প’ গ্রন্থে এ রকম ঘোড়াশাহ পীরের মাজারের গল্প আছে।…)
এবার আমার সেই ঘটনা বলি। এই গল্পের সাথে উপরের গল্পের বেশ মিল আছে। একজন আমাকে জানাল সরকারের বিশেষ ফ্রিল্যন্সিং প্রশিক্ষণ নিয়ে, এক লোক অনেক চেষ্টা করেও, মার্কেটপ্লেস থেকে কোন ইনকাম করতে পারছিল না (পারবে কি করে সে যে আসলে তেমন কিছু শেখেইনি)। মার্কেটপ্লেস থেকে, কোন ইনকাম করতে না পারলেও সে হতাশ হয়নি। ট্রেনিং নেয়ার সময়ই সে বুঝে গিয়েছিল এই দেশে ট্রেনিং করানো একটা বড় ব্যাবসা। সে যে বিষয়েই হোক। কাজেই সে বুদ্ধি করে, নিজের এলাকায় একটা ফ্রিল্যন্সিং প্রশিক্ষণ সেন্টার খুলে বসল। এখন তার ব্যবসা রমরমা। বিশাল তার নামডাক। প্রচুর তার ছাত্র ছাত্রী । মজার ব্যাপার হচ্ছে, তার কোন ছাত্র ছাত্রীই অনলাইনে ইনকাম করতে পারেনি। তবে তার অনেক ছাত্র তার মান রেখেছে। মানে তারা নিজের এলাকায় যেয়ে, তার মতই ফ্রিল্যন্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলে বসেছে এবং যথারীতি তারাও ভাল করছে! কি বুঝলেন? উপরের গল্পের সাথে মিল পাওয়া যায়? মাজার ব্যাবসাটা যেমন পুরটাই ধান্দাবাজি ছিল, তেমনি এই ফ্রিলান্সিং ট্রেনিং সেন্টারও তাই!
অনলাইন ফ্রিলান্সিং নিঃসন্দেহে অনেক কঠিন কাজ। কাজেই আমার মতে যারা অনেকদিন চেষ্টা করেও ফ্রিল্যন্সিং এ কিছু করতে পারছেন না। আমার মনে হয় এই আইডিয়া কাজে লাগাতে পারেন। কি বলেন আপনারা? দয়া করে হাসবেন না। এটা সিরিয়াস ইস্যু। আমি একজনের কথা জানি, যিনি এই প্রশিক্ষণ ব্যাবসা করে ঢাকায় আড়াই কোটি টাকা দিয়ে জমি রেখেছেন। অথচ ফ্রিল্যন্সিং থেকে এক টাকাও ইনকাম করতে পারেনি!
কাজই এখনই সময় দেশের মাঠঘাট সব যায়গা ফ্রিল্যন্সিং প্রশিক্ষণ সেন্টার দিয়ে ভরিয়ে দেবার! এবং অলরেডি দেশটা ভোরে গিয়েছেও 🙂
একদম সঠিক কথা বলেছেন ভাই। আমি আজ থেকে কয়েক মাস আগেই এ রকম অনলাইন সেন্টারের শিকার হতে যাচ্ছিলাম কিন্তু বেচে গিয়েছি এক বড় ভাইয়ের জন্য।
ধন্যবাদ আপনাকে, আরো পোস্ট চাই ভাইয়া।
Erokom aro post. Chai
আমিও প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম বেশ কয়েক জায়গায়, প্রশিক্ষণ নেয়ার অনেকদিন পর বুঝেছি তারা যা প্রশিক্ষণ দেয় সেটা ব্যাকডেটেড, অনেক আগে সেটার চাহিদা মার্কেট প্লেজে ছিল, এখন নেই। অথচ তারা সেই পুরনো প্রশিক্ষণ দিয়েই চলেছে।