প্রসঙ্গঃ Fiverr Seller Plus

Fiverr Seller Plus নিয়ে অনেকের মনেই কৌতূহল এবং প্রশ্ন আছে। ইনবক্সে অনেকেই আমাকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছেন। সমস্যা হচ্ছে আমি নিজেই এটা এখনো চালু করিনি। কাজেই এটা নিজে চালু না করে, কিভাবে এর রিভিউ দেই? তবে আমার ইচ্ছা আছে, এটা শীঘ্রই চালু করার এবং এর থেকে যদি কোন বেনিফিট পাই, তবে সেটা গ্রুপে শেয়ার করার।
আমি আসলে অন্য সেলারদের রিভিউয়ের অপেক্ষায় ছিলাম। সত্যি বলতে আশা করেছিলাম, অনেকেই হয়ত বিস্তারিত ভাবে, এই ব্যাপারে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন। কিন্তু সেই রকম কিছু আমার চোখে পড়েনি। এটাও ঠিক যে, আমাদের মধ্যে কোন কিছু লুকিয়ে রাখার একটা প্রবনতা আছে। যা হোক, আপওয়ার্ক মার্কেটপ্লেসে এই ধরনের প্রোগ্রাম, দীর্ঘদিন ধরে চালু আছে এবং আমি সেখানে টপ রেটেড হবার পর থেকেই, সেটা নিয়মিত ইউজ করছি। কাজেই সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এবং ফাইভারের এই নতুন ফিচারের ব্যাপারে যতটুকু জেনেছি, তার উপরে নির্ভর করে, একটা তুলনামূলক আলচনা করতেই পারি। যেটা হয়ত আপনার সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে হেল্প করতে পারে।
গত বেশ কয়েক বছর ধরে দেখছি, মার্কেটপ্লেসগুলোর মধ্যে এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। বিশেষ করে ফাইভার এবং আপওয়ার্কের মধ্যে। কিছু উদারহরণ দিতে পারি। যেমন শুরু থেকেই ফাইভার, সেলারদের ইনকাম থেকে ২০% কেটে রাখত। অন্যদিকে আপওয়ার্ক কাটত ১০%। কিন্তু ফাইভারের দেখাদেখি তারাও ২০% ফি কাটা শুরু করল। এটা নিয়ে তখন অনেক আলচনা সমালোচনা হয়েছিল। যদিও এটা নিয়ে তাদের কিছু আসে যায় না। অনেকেই সেই সময় আপওয়ার্ক বয়কটের ডাক দিয়েছিল। কিন্তু কে শোনে তাদের কথা। তবে তাদের কিছু ভাল অপশন আছে, যেমন নিদ্দিস্ট বায়ারের কাছ থেকে ৫ হজার ডলার ইনকাম হলে, তখন ১০% করে ফী কাটবে আর ১০ হাজার ডলার ইনকাম হলে ৫% করে কাটবে। ফলে দেখা যাচ্ছে, যারা ছোট ছোট কাজ করেন, তারা সব থেকে বড় ভুক্তভুগি। ফাইভার বায়ারের কাছ থেকে অর্ডারের সময় সার্ভিস ফি নেয়া শুরু করার পরে, আপওয়ার্কও সার্ভিস ফি নেয়া শুরু করে।
একটা সময় আপওয়ার্কে টেস্ট সিস্টেম ছিল, কিন্তু দেখা গেল নেটে সব উত্তর পাওয়া যায়, ফলে সবাই সেগুলো কপি করে, দেদারসে ভাল টেস্ট রেজাল্ট পাওয়া শুরু করল। আমি নিজেই ১৫ টেস্টে টপ ১০%-২০% এর মধ্যে ছিলাম 😉 এটা দেখে তারা সবার প্রোফাইল থেকে, সব টেস্ট উঠিয়ে দিল। যদিও এখন অনভাবে টেস্ট দেয়া যায়, সেদিকে আর গেলাম না। এদিকে ফাইভার আপওয়ার্ককে দেখিয়ে দেয়ার জন্য, টেস্ট সিস্টেম চালু করে দিল। ফলাফল সেই যেউ লাউ সেই কদু, এখন শত শত গ্রুপ আর স্পামার আছে যারা, ইংরেজি টেস্ট আর অন্যান্য টেস্টে পাশ করিয়ে দেয়ার জন্য, গ্রুপে গ্রুপে নিরন্তুর স্পামিং করে যাচ্ছে। এমনকি বুস্টীং করে রীতিমত রমরমা ব্যাবসা করছে। তবে ফাইভার হচ্ছে ঘাড় ত্যাড়া মার্কেটপ্লেস, তারা এটা সহজে এই টেস্ট সিস্টেম বাদ দেবে না। ফলে বাটপাড়দের বাটপাড়ী আরও অনেকদিন ধরে চলবে।
 
ফাইভারের ভাল করার পিছনে, তাদের অসাধারণ গিগ সিস্টেম মুল চালিকাশক্তি। এটা দিয়ে ফাইভার খুব ভাল করার ফলে, আপওয়ার্কও হুবহু ফাইভারের গিগের ক্লোন কপি “প্রোজেক্ট” নামে দিয়ে নিয়ে এসেছে। যদিও এটা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তার পরেও এটা ভবিষ্যতে ভাল করবে নিঃসন্দেহে। কারন বড় বড় সেলারেরা ইতিমধ্যেই এর মাধ্যমে কাজ পাওয়া শুরু করেছে। আমি নিজেও একটা কাজ আজকে শেষ করেছি। আগেই বলেছি, আপওয়ার্কে আগে থেকেই প্লাস মেম্বারশিপ ছিল, তাই এবার ফাইভারের কপি করার পালা। তারাও আপওয়ার্কের অনুসরনে Fiverr Seller Plus নিয়ে আসল। আপওয়ার্কে প্লাস মেম্বারশিপে মাসে ১৫ ডলার কাটে, সেখানে ফাইভার ২৯ ডলার করে কাটবে।
আপওয়ার্কের প্লাস মেম্বারশিপের সুবিধাগুলো নিচে বলা হল।
১. ফি মাসে ১৫ ডলার
২. ৮০ টা ফ্রি কানেক্টস
৩. প্রফাইলের নামের URL নিজের মত কাস্টমাইজ করা যায়।
৪. প্রোফাইল কখনো হাইড হবে না। এখানে কেউ রেগুলার কাজ না পেলে, বা বেশি বিড করে কাজ না পেলে, কিছুদিন পর প্রোফাইল হাইড করে দেয়। ফলে সেলার আর বিড করতে পারে না এবং তাকে চান্দের দেশে পাঠিয়ে দেয়। মানে তাকে আর সার্চ করে খুজে পাওয়া যায় না, এমনকি সেলারকে এই কারনে, ব্যান করার রেকর্ডও আছে। এছাড়া এটা না নিলে, অনেক সময় বিড করার পরেও, প্রপোজাল বায়ারের কাছে পৌছায় না। হাইড হয়ে থাকে।
৫. কোন বায়ার নেগেটিভ দিলে, সেটা সাপোর্টে বলে শর্ত সাপেক্ষে রিমুভ করা যায়।
৬. ডেডিকেটেড কাস্টমার সাপোর্ট, মানে সাপোর্টে নক দিলে দ্রুত উত্তর পাওয়া যায়।
 
সমস্যা হচ্ছে আপওয়ার্কে টিকে থাকতে হলে, এই প্লাস মেম্বারশিপ না নিয়ে উপায় নেই, যদি না আপনার রেগুলার বায়ার না থাকে। আর প্লাস মেম্বারশিপ নেয়ার পরেও যে, আপনি রেগুলার কাজ পাবেন এমন না। কারন বেশির ভাগ সেলারেরই এটা নেয়া আছে। ফলে যেই লাউ সেই কদু। মাঝখান থেকে আপওয়ার্কের বিপুল লাভ লাভ। এটা করেও তারা বসে নেই, এখন নিয়ে এসেছে বুস্টীং সার্ভিস, অর্থাৎ যে বিডে আপনি হয়ত দুইটা কানেক্টস খরচ করতেন, এখন ৫ টা খরচ করলে সেটা বায়ারের কাছে আরও সামনের দিকে থাকবে। ফলে এখন শুরু হয়েছে আরও অসুস্থ প্রতিযোগিতা। যেমন আমার মাসে প্লাস মেম্বারশিপের ৮০ টা কানেক্টস কেনার পরেও, আরও অতিরিক্ত কানেক্টস কেনা লাগে। মাসে গড়ে ২৫ ডলার খরচ করেও কাজ পেতে হিমশিম খেতে হয়। আর এদিকে আপওয়ার্ক লালে লাল হয়ে যাচ্ছে।
 
আপওয়ার্কের এই রমরমা সিস্টেম দেখে, ফাইভার আর বসে থাকবে কেন? তারাও নিয়ে এল “ফাইভার সেলার প্লাস সিস্টেম” আসুন দেখে নেই তাদের এই ফিচারের সুবিধাগুলো
১. একজন ডেডিকেটেড সাকসেস ম্যানেজার, যিনি আপনার সাথে প্রয়জনে কথা বলবেন এবং সুপরামর্শ দেবেন। যেমনটা আগের টপ রেটেড সেলারদেরদের তারা দিত।
২. এডভান্স এনালাইটীক্স ড্যাসবোর্ড যেখানে অনেক এডভান্স ফিচার আছে, যেগুলো হেল্প করবে, আপনার গিগের পারফরমেন্স জানতে এবং ইম্প্রুভ করতে।
৩. আপনার রেগুলার বায়ারদের জন্য কুপন সিস্টেম চালু করতে পারবেন। যেটা আপনার সেল আরও বাড়াতে হেল্প করবে।
৪. বায়ার রিকইয়েস্ট পাঠাবার সময়, আপনার রিকইয়েস্ট উপরের দিকে থাকবে। ফলে সেল পেতে সুবিধা হবে।
৫. তারা বলছে এটা চালু করলে, আপনার বিজনেস গ্রো করবে, এবং ইনকাম ভাল হবে।
৬. তাদের মাসিক ফি মাত্র ২৯ ডলার। এটার জন্য কোন ক্রেডিট কার্ড লাগবে না। আপনার একাউন্ট থেকেই তারা কেটে নেবে।
এখন আমার ব্যাক্তিগত মতামত হচ্ছে, মার্কেটপ্লেসে টীকে থাকতে হলে, তাদের এসব আবদার আপনাকে মেনে চলতেই হবে। কিচ্ছু করার নেই। যেখানে ফাইভার এখন পুরা ট্রাফিক এবং সেলস পুরাপুরি নিজেরা কন্ট্রল করে। একটা সময় ছিল, কেউ রেগুলার ভাল কাজ করলে এবং ভাল অর্ডার পেলে, গিগ মাসের পর মাস র‍্যাঙ্ক করে বসে থাকত। সেল নিয়ে চিন্তা করা লাগত না। সেই দিন শেষ হয়েছে এখন অনেক আগেই। এখন ফাইভার যেভাবে আপনাকে নাচাবে, আপনাকে সেভাবেই নাচতে হবে। কিছু করার নেই আগেই বলেছি। যারা রেগুলার রিসার্চ করেন, তারা ইতিমধ্যেই খেয়াল করেছেন যে, আপনার সেল গতমাস থেকে অনেক কমে গেছে। আমার নিজেরই সেল গতমাস থেকে ৫০% ড্রপ করেছে কোন কারন ছাড়াই। আমি যত জনের সাথে কথা বলেছি, প্রায় সবারই সেল কম বেশি এই মাসে ড্রপ করেছে। যদিও তাদের গিগ র‍্যাঙ্কে আছে। তবে কিছু এলিয়েন প্রজাতির সেলার আছে, যত সুনামি আর ঝড় বয়ে যাক, তাদের নাকি সেল কমে না, সত্যি মিথ্যা জানি না। এসব এলিয়েনদের কথা আলদা।
 
আমার ফাইন্ডীংস হচ্ছে, ফাইভার ইচ্ছা করেই আপনার গিগের ইম্প্রেশন ক্লিক এসব কমিয়ে দিচ্ছে, যেন আপনি দ্রুত তাদের সেলার প্লাস মেম্বারশিপটা নেন। কারন এটা তাদের বিজনেস প্লান যে, যেসব সেলার ভাল করছে, তাদের কাছ থেকে যেভাবেই হোক তারা মাসে ২৯ ডলার বা বছরে মাত্র ৩৪৮ ডলার কেটে নেবে। যারা এটা নেবে না, তারা যে কোন ভাবেই হোক অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়বে। যেমনটা আপওয়ার্ক তার সেলারদের সাথে করছে। এটাই কঠিন বাস্তবাতা। যদিও এটা চালু করলেই যে আপনার সেলের বন্যা বয়ে যাবে এমন না। তবে আপনি যদি এই অপশন খুব বুদ্ধিমত্তার সাথে ইউজ করতে পারেন, তবে আপনার সেল বাড়বে নিঃসন্দেহে। কাজেই আমি বলব, আপনার যদি খরচ করার সামর্থ্য থাকে, তবে দ্রুত এই ফিচার চালু করেন এবং অন্তুত ১ মাস ফলাফল পর্যবেক্ষণ করেন। যদি ভাল মনে করেন তবে চলু রাখবেন। আর ভাল মনে না করলেও চালু রাখেন, বন্ধ করবেন না, পারফরমেন্স খারাপ হলে, আপনার ডেডিকেটেড ম্যানেজারকে বার বার প্রশ্ন করেন, কেন আপনি ভাল করছেন না। তারাই আপনাকে হেল্প করবে।
সত্যি বলতে আমার সেল যেভাবে ফল করেছে, তাতে আর বেশিদিন দেরি করা যাবে না। দ্রুতই এই ফিচার চালু করতে হবে। অনেকের মনে একটা প্রশ্ন জাগতে পারে যে, এই ফিচার চালু করলে, গিগ প্রমোশন ফিচার চালু রাখব কিনা, আমার মতে জি অবশ্যই চালু রাখবেন, কারন আপওয়ার্কেও এখন কানেক্টস খরচ করে বুস্টীং করতে হয়, যেন প্রপজাল বায়ারের কাছে আগে পৌছায়। ফাইভারের প্রমোশন সিস্টেমটাও অনেকটা সেই রকম। কাজেই কিছু করার নেই। যতদিন মার্কেটপ্লেসের উপর নির্ভরশীল থাকবেন, ততদিন তাদের মত করেই চলতে হবে। আমাদের হাত পা বাঁধা। কিছু করার নেই। একমাত্র মার্কেটপ্লেসের বাহিরে, বায়ারের সাথে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারলেই আপনি স্বাধীনতার আসল স্বাদ পাবেন।

সবাইকে ধন্যবাদ।

সেলার প্লাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিঙ্ক ভিজিট করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *