পেশাগত বিষয়ে আমাদের ভুল দৃষ্টিভঙ্গি

একটা গল্প দিয়ে শুরু করা যাক।  দুবাইয়ের এক বিরাট জুয়েলারি দোকান। সেখানে অনেক দামি হীরা, চুনি, মনি মুক্তা, দামি দামি পাথর বিক্রি হয়। এক আরব শেখ হীরা কিনতে এসেছে, সে এটা সেটা দেখছে। শেখ একটা বিরল দামি গোলাপি হীরার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করল। দাম কয়েক কোটি টাকা (আরব শেখদের কাছে টাকা কোন বিষয় না )। সেলসম্যন খুঁটিনাটি, টেকনিক্যাল বিষয়গুলো, রোবটের মুখস্ত বলে যাচ্ছে। প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টার পরও, সেলসম্যান আরব শেখকে হীরা কিনতে রাজি করতে পারল না। শেখ বলল যে। সে এটা  কিনবে কিনা সেটা পরে জানাবে। দোকানের মালিক সেখানে উপস্থিত ছিল। সে সব কিছুই দেখছিল। যখন আরব শেখ দোকান থেকে চলে যাচ্ছে, তখন সে বিনীত ভাবে শেখের কাছে ৫ মিনিট সময় চাইল। শেখ বলল যে, আপনার সেলসম্যন ত সব কিছু বলে দিয়েছে, আপনি আর কি বলবেন। দোকানের মালিক তার পরেও হাত জোর করে ৫ মিনিট সময় নিয়ে নিল।  মজার ব্যাপার হচ্ছে ৫ মিনিট কথা বলার পর, আরব শেখ ওই দামি হীরা কিনল।

হীরা হাতে নিয়ে, শেখ অবাক হয়ে বলল, আপনার সেলসম্যান প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টার পরও, আমাকে দিয়ে হীরা কিনাতে পারল না, অথচ আপনি ৫ মিনিটেই তা করলেন। বিষয়টি আসলে কি বলুনত? তখন মালিক বলল, আমার সেলসম্যান হীরা সম্পর্কে অনেক কিছু জানে, এটা তার চাকরি, কিন্তু আমি হীরা ভালবাসি। আর এই কারনেই আমি হীরা বিক্রি করতে পেরেছি। আসলে বিষয়টি খুব সহজ, আমরা যখন কাজকে ভালবাসি, কাজই যখন আনন্দের উৎস হয়, তখন তা থেকে সাফল্য আসবেই। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমরা যে কাজ করে, রুটি রোজগার করি তাকে ভালবাসি না। এই কথা আমাদের ফ্রিলান্সারদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যার কারনে আমরা সফল হই না।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে কাজকে সম্মান না করা। অনেককে জিজ্ঞাস করি কি করে? উত্তর দেয় এই ভাই ছোট খাট একটা চাকরি করি। অর্থাৎ তার কাজটিকে অসম্মান করছে, সে তার পেশাকে ছোট করছে। এই রকম যারা বলে, তারা সাধারণত জীবনে উন্নতি করতে পারে না। দুনিয়ার কোন কাজই ছোট নয়। আমি ঝাড়ুদার হতে পারি, কিন্তু আমার চাকরি ছোট নয়। কারণ এটা দিয়েই খোদা আমার রিজিক দেন,আমাকে লালন পালন করেন। অনেক ফ্রিলান্সার কি কাজ করে বলতে লজ্জা পায়। জিজ্ঞাস করলে বলে, ভাই এই ছোট খাট কাজ করি। মানে সে তার কাজকে ছোট করছে। অথচ ডাটাএন্ট্রির কাজ করে, গত ৫ বছরে ২০০K ইনকাম করেছে এই ঘটনা আমরা জানি। আবার হলিউড মানের 3D র কাজ জানে, এমন একজন, গত ৫ বছরে মার্কেটপ্লেস থেকে তেমন কোন ইনকামই করতে পারেনি, বাধ্য হয়ে লোকাল ছোট কোম্পানিতে অল্প বেতনে জব করছে, এমন ঘটনাও জানা আছে।

বিষয়টা আসলে কিছুই না। পেশাকে ভালবাসতে হবে। যার যা আছে সেটা নিয়ে শুরু করতে হবে। আপনার সীমাবদ্ধতাই আপনার শক্তি। ভাল স্যু্‌ট টাই, জুতা নেই, এই জন্য ইন্টারভিউয়ে যেতে পারছে না, এই ধরনের মন মানসিকতা যদি কোন বেকারের থাকে, তবে সে কোন দিনই চাকরি পাবে না। কারন সে এগুলো কিনতে পারবে না, বা লজ্জায় ধার করতে পারবে না। আর তাই ইন্টারভিউও দেয়া হবে না। তার গায়ে যদি ছালাও থাকে, তবে আমি বলব সেই ছালা গায় দিয়েই, ইন্টারভিউ বোর্ডে এটেন্ড করা উচিৎ। বোর্ডের কেউ যদি প্রশ্ন করে, গায়ে ছালা কেন?  উত্তর হবে আমার এখন এটা কেনার ক্ষমতাই আছে। আমাকে চাকরি দেন, দেখেন মাস শেষেই স্যুট টাই পড়ে অফিস করব। দেখা যাবে চাকরি তারই হয়েছে। আসলে ইন্টারভিউ বোর্ডে দেখা হয় কার কত আত্মবিশ্বাস আছে। যাচাই করা হয়, সে চাকরিটা করতে পারবে কিনা। পেশাগত জীবনে অনেক জব ইন্টারভিউ নিয়েছি। এমনও দেখেছি যে, একটা প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারেনি, তারই চাকরি হয়েছে। কাজেই লজ্জার কিছু নেই। যা আছে সেটা নিয়েই শুরু করার মত, আত্মবিশ্বাস থাকাটাই জরুরী।

তাই ফ্রিল্যান্সার ভাইদের বলি, কাজকে ভালবাসুন, কাজকে সম্মান করুন, সে যত ছোট কাজই হোক। ফ্রিলান্সিংয়ে আপনি সফল হবেনই। ধন্যবাদ!

Similar Posts