The Da Notebook

সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা! আশা করি সবাই ভাল আছেন। নতুন বছরের প্রথম পোস্ট শুরু করছি। আমি ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি প্রত্যেক সফল ফ্রিলান্সারের কাজের একটা নিজস্ব স্টাইল আছে। আর এটাই তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে, তাকে সফল হতে সাহায্য করে। তাই আমি বলব আপনি যদি সফল হতে চান, তবে আপনি যার মত হতে চান, তার সাথে বেশি বেশি যোগাযোগ রখেন। তার সাফল্যের সুত্র খুজে বের করেন, সেগুলো পুরাপুরি আয়ত্ত করেন। আপনি অবশ্যই সফল হবেন।
 
আমি সফল ফ্রিলান্সার না, তবে একটা জিনিস আমাকে অনেক খানি এগিয়ে দিয়েছে, বলা যায় ফ্রিলান্সিং এ প্রাণ সঞ্চার করেছে। আজকে সেটাই শেয়ার করছি। ফ্রিলান্সিং শুরু করি ২০১৪ সালের মাঝামাঝি থেকে। মনে আছে বায়ারের প্রচুর মেসেজ পেতাম, আবার কাজ করার সময়ও প্রচুর তথ্য জমা হত। সব কিছু মনে রাখা এবং গুছিয়ে রাখা এবং কাজ করা প্রায় অসম্ভব ছিল। ফলে যেটা হত, অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভুলে যেতাম। অনেক ভুল হত। ফলে কাজেরও অনেক ক্ষতি হত। অভিজ্ঞ অনেকের সাথেই যোগাযোগ করলাম। বেশির ভাগই আমাকে বিভিন্ন ধরনের এপস এবং সফটওয়ার সাজেস্ট করতে লাগল। কিছু কিছু ট্রাই করলাম। কিন্তু আমি অনেকটা সেকেলে লোক বলে 🙁 আমার তেমন একটা ভাল লাগল না। পরে অনেক ভেবে চিন্তে একটা উপায় বের করলাম। আর সেই ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সেটা ইউজ করছি। বলা যায় এটা প্রায় নিখুঁত একটা টেকনিক। আমি গর্ব করেই বলি আমার কোন বায়ার একটা কাশি দিলেও আমি সেটা মার্ক করতে পারি 🙂 মজা করছি না, আসলেই!
 
এবার আসি কি সেই জিনিজ। পোষ্টের হেডিং দেখেই বুঝে যাবার কথা। আমি একটা মোটা নোটবুক ইউজ করি যাকে ট্যালি খাতা বলে। ষ্টেশনারী দোকানে ট্যালি খাতা বললেই পেয়ে যাবেন। লালসালু কাপড়ে বাঁধাই করা প্রস্থে চিকন কিন্তু লম্বা এইসব ট্যালি খাতা মুলত মুদি বা ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে হিসাবের জন্য ইউজ করা হয়। একটা মোটা খাতা কিনে নিলে অনায়াসে ২/৩ বছর ইউজ করতে পারবেন। আমার পিসির পাসেই এটা রাখা থাকে। আমি এটা নিয়মত মেইন্টেইন করি, এবং চেক করি। এখন আসি আমি এটা কিভাবে ইউজ করি।
 
১. প্রতিদিনের সবকিছু গুরুত্বপূর্ণ সবকিছু আমি ট্যালি খাতায় নাম্বার সহ সিরিয়াল অনুযায়ী খুব সংক্ষেপে লিখে ফেলি। পাতার উপরে তারিখ এবং বার লেখা থাকে।
২. কোন বায়ার মডিফিকেশন চাইলে, যাটা আমি পরে করব, সেটা সাথে সাথেই লিখে ফেলি।
৩. কোন বায়ারের গুরুত্বপূর্ণ কোন মেজেস সাথে সাথেই লিখে ফেলি।
৪. কোন বায়ার হয়ত ১/২ সপ্তাহ বা মাস পরে একটা কাজ দেবে সেটা সাথে সাথে লিখে ফেলি।
৫. কেউ হয়ত কোন বিষয়ে ইনকোয়ারি করেছিল। সেটাও লিখে ফেলি। সাধারণত ২/৩ দিন পর পর তাকে রিমাইন্ডার দেই। বেশি চাপাচাপি করি না।
 
মোট কথা গুরুত্বপূর্ণ কোন খুঁটিনাটি বাদ রাখি না। আপনারা হয়ত মনে করছেন গরু রচনার মত অনেক কিছু লিখে ফেলি 🙂 বিষয়টা আসলে তা নয়। সব কিছু খুব সংক্ষেপে কয়েক শব্দে লিখে ফেলি এটা আসলে একটা রিমাইন্ডারের মত কাজ করে। সব মিলে এই খাতা মেইন্টেইন করতে আমার দিনে ১০ মিনিটের বেশি খরচ হয় না। পিক সিজনে প্রতিদিন আমার ২০/৩০ টা বিষয় এন্ট্রি থাকে। যে কাজ সমাধান হয়ে যায়, সেটা আমি সাথে সাথে কেটে দেই। এভাবে দিনে
শেষে দেখা গেল হয়ত ২৫ টার মধ্যে ১৫ টা সলভ হয়ে গেছে। বাকি ১০ টা পরের তারিখের পৃষ্ঠায় সাথে সাথে লিখে ফেলি। ওই দিন আবার নতুন কিছু এড হয়। আবার কিছু সল্ভ হয়। এভাবে চলতেই থাকে। এবং কোন কিছু ১০০% সলভ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন লিখতেই থাকি। ফলে নিজের মধ্যে একটা তাড়না কাজ করে কাজটা সমাধান করে ফেলার। এমনও হয়েছে দুই মাস পরে এক বায়ার হয়ত একটা কাজ দেবে বলেছিল। আমি ঠিক দুই মাস পরে, নিদিষ্ট দিনের আগের দিন আমি তাকে মেসেজ দিয়েছি 🙂 বায়ারত পুরাপুরি অবাক :O এই দুই মাস আমি এটা প্রতিদিন লিখতেই থাকি 🙁 আগেই বলেছি কোন বায়ারের গুরুত্বপূর্ণ হালকা একটা কাশিও আমি মার্ক করতে পারি। ফলে যেটা হয়েছে, আমি আমার কাজ অনেক সুন্দর এবং গোছালো ভাবে করতে পারছি, কোন খুঁটিনাটি কোন কিছুই বাদ যায় না।
 
অনেকে হয়ত বলবেন গুগলের বিভিন্ন সার্ভিস আছে, বা অনেক মোবাইল এপস আছে এগুল ইউজ করতে। আসলে আমার কাছে এটাই ভাল লাগে এবং অনেক সহজ মনে হয়। আমি মনে করি, কাজ গুছিয়ে করার জন্য অনেকেই হয়ত আরও অনেক এডভান্স টেকনিক ইউজ করেন। আশা করি সেগুলো শেয়ার করবেন। এই পদ্ধতি ইউজ করে আমি কি পরিমাণ উপকৃত হয়েছি সেটা বলে বোঝানো যাবে না। গত চার বছরে ২২০০+ বায়ার আর ৫৫০০+ কাজ এই খাতা দিয়েই খুব সুন্দর ভাবে মেইন্টেই করেছি, তেমন একটা সমস্যা কখনো হয়নি। আশা করি এটা হয়ত আপনাদেরও কাজে আসবে, কেউ হয়ত কাজে লাগাবেন।
 
ধন্যবাদ!

Similar Posts

One Comment

Comments are closed.