ফ্রিলান্সিং বিষয়ক বিচিত্র অভিজ্ঞতা
ফ্রিলান্সিং করতে যেয়ে চার বছরে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। এর কয়েকটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি।
গার্মেন্টস কর্মী যখন ফ্রিলান্সারঃ
লেখালেখি করার কারনে, বিচিত্র কিছু মানুষ আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আছে। বছর দুই আগে একজন ইনবক্সে যোগাযোগ করেছিল, ফ্রিলান্সিং এর ব্যাপারে কিছু টিপসের জন্য। তার লেখার স্টাইল, আর বানানের ভুলভ্রান্তি দেখে বুঝলাম অল্প শিক্ষিত কেউ। ভাবলাম এইত সুযোগ, কিছু সবক দেই বললাম কল দেন কথা বলি। সে কল দিল, কথায় গ্রামের আঞ্চলিক টান প্রবল। জানাল গার্মেন্টসে চাকরী করে। বেতন খুবই অল্প, তাই ফ্রিলান্সিং করতে চায়। বুঝলাম একে দিয়ে হবে না! বিভিন্ন বিষয়ে কথা শুরু হল। আমি তাকে জ্ঞান দেয়া শুরু করলাম। এবং তাকে বুঝালাম যে ফ্রিলান্সিং তার জন্য না। ইংরেজি ভাল জানতে হবে, ভাল কাজ জানতে হবে, ভাল লেখা পড়া জানতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমাকে অবাক করে দিয়ে সে জানাল সে নাকি ইতিমধ্যে অনলাইন থেকে ভাল ইঙ্কাম করেছে। কিন্তু সেই কাজ এখন বন্ধ, তাই নতুন কিছু শিখতে চাচ্ছে। আমি মনে করলাম, সে মনে হয় আমার সাথে ফাইজলামি করছে। কিভাবে কি করল জিজ্ঞেস করতে সে জানাল, সে আগে থেকেই গার্মেন্টসে চাকরী করত। তার পাশের রুমের একজন, রুম বন্ধ করে পিসিতে সারাদিন কি যেন করত। তার নাকি ভাল ইনকাম। কৌতূহল বশত তাকে জিজ্ঞেস করাতে, সে তাকে এড়িয়ে যায়। ফলে তার কৌতূহল আরও বেড়ে যায়। নাছোড় বান্দার মত লেগে থেকে, এবং অনেক কষ্টে তাকে রাজি করায় যে, তাকে ০৩ দিন এই কাজ শিখিয়ে দেবে। আসলে ওই লোক ইউটিউবে ভিডিও দিত। মানে সে একজন ইউটিউবার ছিল, মূলত অনলাইন থেকে দেশি বিদেশি আজে বাজে ছবি কালেক্ট করে ভিডিও তৈরি করত। এগুলো ইউটিউবে দিয়ে ইঙ্কাম করত। একে সফট পর্ণগ্রাফি বলা যায়। সেই তিনদিন সে এটা তার কাছে থেকে ভাল করে শিখল। এরপর পিসি কিনে, এই কাজ নিজেই শুরু করে দিল। দিন দিন তার ইঙ্কাম বাড়তে লাগল।
একসময় সে গার্মেন্টসের চাকরী বাদ দিয়ে, এটার পিছনেই ফুলটাইম কাজ শুরু করে দিল। মাসে ১৫/২০ হাজার পর্যন্ত ইঙ্কাম হত। কিন্তু তার ভাষ্যমতে নতুন প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্প এসে ইউটিবের এই সব আজে বাজে জিনিস বাদ দেয়া শুরু করল ফলে তার চ্যানেলগুল সব ব্যান হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও সে ফেরাতে পারেনি। বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করেও কিছু করতে না পেরে, বাধ্য হয়ে আবার তার আগের পেশায় ফিরে যায়। গল্প এখানেই শেষ করছি। কাজেই কেউ যদি নিজেকে ফ্রিলান্সার দাবি করে তবে হেসে উড়িয়ে দেবেন না। সত্যি হলেও হতে পারে এমনকি পাশের বাসার বুয়াও যদি নিজেকে ফ্রিলান্সার দাবি করে অবিশ্বাস করার কিছু নেই এই দেশে ভাই সবই সম্ভব
CNG ড্রাইভার যখন ফ্রিলান্সারঃ
এই ঘটনা আমি আমার পরিচিত একজনের কাছে থেকে শুনেছিলাম। সে নাকি ভাল ছবির রিটাচিং এর কাজ করত। বিশেষ করে ক্লিপিংপাথের কাজ ভাল করত। CNG চালানোর পাশাপাশি অবসর সময়ে একটা আউটসোর্সিং অফিসে পার্টটাইম কাজ করত। তাকেও আমরা ফ্রিলান্সার বলতে পারি।
RAB ফ্রিলান্সারঃ
তিনি এই গ্রুপেই আছেন। তার সাথে আমার বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। RAB এ চাকরীর পাশাপাশি গ্রাফিক্সের কাজ শিখছেন। বেশ ভাল ডিজাইন করেন। এতদিনে তার অনলাইনে ইঙ্কামে চলে আশা কথা। হয়ত ক্রসফায়ার অপারেশন শেষে, হাত মুখ ধুয়ে রাতে পিসির সামনে বসেন ফ্রিলান্সিং করার জন্য ( আমিন ভাই মজা করলাম, আপনি যদি এই লেখা পড়ে থাকেন তবে সিরিয়াসলি নেবেন না )
দোকানদার ফ্রিলান্সারঃ
দোকানদার ফ্রিলান্সারকে চিনি, মানে নিজের দোকানে বেচাবিক্রির পাশাপাশি ফ্রিলান্সিং করেন। দোকানে সমসময় ল্যাপটপ চালু থাকে। ক্রেতারা কিছু কিনতে আসে, মনে করে সে মনে হয় সারাদিন বসে বসে ল্যাপটপে ভিডিও দেখে আর ফেসবুক চালায়। আসল কাহিনী কেউ জানে না। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সে বায়ারের কাজ করে। মোটামুটি ভাল তার ইনকাম।
আরও কিছু বিচিত্র পেশার ফ্রিলান্সারঃ
বিসিএস ফ্রিলান্সার চিনি, যিনি সরকারের অনেক উচ্চপদে আছেন, পাশাপাশি ফ্রিলান্সিং করেন, শিক্ষক ফ্রিলান্সার চিনি যিনি হাইস্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি একজন সফল ফ্রিলান্সার, মজার ব্যাপার হচ্ছে এটা তার কলিগেরা কেউ জানে না, এই রকম অনেক ফ্রিলান্সারের গল্প জানি। এগুলো লিখে শেষ করা যাবে না।
পরিশেষে এটাই বলতে চাই, অনলাইন ফ্রিলান্সিং যার কাছে নেশার মত, তাকে কোন কিছুই আটকে রাখতে পারবে না। সে সফল হবেই। অথচ আমরা অনেকেই আছি, হাই স্পিডের ইন্টারনেট, ভাল মানের পিসি থাকার পরেও ফ্রিলান্সিং এ সফল হই না। অথচ ফেসবুকে ঠিকই প্রচুর সময় দেই, আর বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট দিয়ে বেড়াই কাজ পাচ্ছি না বলে। আসলে নিজেকে শোধরাতে হবে। এই সব ভিন্ন পেশার পরিশ্রমী ফ্রিলান্সারদের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।
ধন্যবাদ!