খারাপ বায়ারের প্যাঁরা আর বিষকন্যার গল্প

গত প্রায় মাস দুয়েক ধরে এক বায়ারের কাজ করছি। সমস্যা হচ্ছে একজন বায়ার যত ধরনের প্যাঁরা দেয়া যায়, তার সব কিছুই সে দিচ্ছে। আপনারা হয়ত বলতে পারেন, এত প্যাঁরা নেয়ার কি দরকার, কাজ কান্সেল করে দিলেইত হয়। কিন্তু আমি ভিন্ন একটা কারনে কাজ কান্সেল করছি না। আমি আসলে দেখতে চাইছি এই বায়ার আমার আগের বায়ারদের প্যাঁরা দেয়ার রেকর্ড ভাংতে পারে কিনা 🙂 আমি আসলে মজাই পাচ্ছি, আমার মনে হচ্ছে সে রেকর্ড ভাংতে পারবে না, কারন সে ইতিমধ্যেই অনেকটা নমনীয় হয়ে গেছে, আমার সাথে মোটামুটি একটা ভাল রিলেশন হয়ে গেছে। মনে হয় বুঝতে পারছে আমার সহ্য করার ক্ষমতা তার ধারনারও বাহিরে 🙂
 
বিষকন্যার গল্প বলছিলাম। এটা সত্যি কাহিনী এবং এটা ইতিহাসে পাতায় লেখা আছে। মধ্যযুগের রাজা বাদশাহদের সময়ের কাহিনী। সেই সময়ে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, কুটচাল, বিশ্বাস ঘাতকতা এমন খারাপ কোন কিছু ছিল না যে রাজা বাদশাহদের মধ্যে হত না। কেউ কাউকে বিশ্বাস করত না। ভাই ভাইয়ের সাথে, পিতা পুত্রের সাথে, এমনকি মা নিজের সন্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করত। সেই সময় ছিল এই বিষকন্যদের সময়। বিষয়টা খুলে বলি, খুব ছোট বেলায় সুশ্রী কন্যা সন্তানকে অপহরণ করা হত বা চুরি করে নিয়ে আসা হত। এর পরে তাদের দেহে সহনীয় মাত্রায় অল্প অল্প বিষ প্রয়োগ করা হত! আস্তে আস্তে বিষের মাত্রা বাড়ানো হত। তাঁরা যখত যৌবন প্রাপ্ত হত, তখন তাদের দেহ বিষের সর্বচ্চ মাত্রা সহ্য করতে পারত ! মানে তাদের পুরা দেহটাই বিষে পরিপূর্ণ থাকত। কথিত আছে তাদেরকে বিষাক্ত গোখরা সাপ দংশন করলেও, সাথে সাথে সেই সাপ মারা যেত :O এমনকি তাদের মুখের লালা পর্যন্ত বিষাক্ত ছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে শরীরে এত মারাত্মক বিষ নিয়েও তাঁরা দিব্যি সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকত।
 
ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাদের বিশেষ মিশনে পাঠান হত। টার্গেটেড ব্যাক্তি তার সংস্পর্শে আসা মাত্রই মারা যেত। ফলে সহজেই শত্রু ঘায়েল করা যেত। ডেথ কিসের কথা বলা আছে। মানে বিষকন্যা কাউকে চুমু দিলেই, সাথে সাথে খেল খতম 🙁 কথিত আছে সম্রাট নেপলিয়ানকে হত্যার জন্য ইংরেজরা বিষাক্ত জীবানু বহনকারী এক সুন্দরীকে, বিভিন্ন উপঢৌকনের সহ সম্রাটের কাছ পাঠিয়েছিল। যদিও পরে এই ষড়যন্ত্রে সফল হয়নি। কালের পরিক্রমায় বিষকন্যারা হারিয়ে গেছে। তবে তাঁরা একটা সত্য আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গেছে, সেটা হচ্ছে মানুষের সহ্য করার ক্ষমতা আকল্পনীয়। মানুষ এমন এমন জিনিস সহ্য করতে পারে যা আপাত দৃষ্টিতে অসম্ভব মনে হয়।
 
বলছিলাম খারাপ বায়ারের কথা। খারাপ বায়ারের সংখ্যা একেবারের হাতে গোনা। একজন ফ্রিলান্সারের ফ্রিলান্সিং লাইফে এই ধরনের বায়ার আসতেই পারে। তবে এটা নিয়ে বিচলিত হবার কিছু নেই। অনেকেই দেখি খারাপ বায়ারের পাল্লায় পড়ে রীতিমত অসহায় হয়ে পড়ে, বায়ারকে গালমন্দ করে, গ্রুপে গ্রুপে পোষ্ট দিয়ে বায়ারের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে 🙂 আমি বলব এটাকে ইতিবাচক ভাবে দেখেন। একজন চূড়ান্ত খারাপ বায়ার আপনার জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। সে হয়ত আপনার সহ্য করা ক্ষমতার চূড়ান্ত পরীক্ষা নেবে। যাই হোক না কেন, আপনাকে এই পরীক্ষায় অবশ্যই পাশ করতে হবে। যদি পাশ করতে পারেন, তবে সে আপনার কি যে উপকার করল, সেটা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। কারন এর পরে কোন বায়ারের ছোট খাট প্যাঁরা আপনার কাছে কিছুই মনে হবে না 🙂 নিজের উদাহরণ দিতে পারি, কাজ করতে যেয়ে আমি বায়ারের এত প্যাঁরা সহ্য করেছি যে, এখন সাধারণ কোন সমস্যা আমার গায়েই লাগে না 🙂 আশা করি ব্যাপারটা বুঝাতে পেরেছি। কাজেই নিজের সহ্য ক্ষমতা বাড়ান, আপনি ফ্রিলান্সিংএ অনেক ভাল করবেন। এই লাইনে টিকে থাকতে হলে এর কোন বিকল্প নেই। একটা জোকস দিয়ে পোষ্ট শেষ করব।
 
এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে বলছে দোস্ত খুব বিপদে আছি। তুমি বিপদের সময় কি কর? বন্ধু বলল আমি আমার মানিব্যাগ বের করে আমার বৌয়ের ছবি দেখি। বন্ধু বলল বুঝেছি, ভাবীর সুন্দর মায়াবী মুখখানা দেখে তুমি সব ভুলে যাও। উত্তরে সে বলল, আরে নাহ, আসলে আমার বৌয়ের ছবি দেখি আর ভাবি, এই মারাত্মক বিপদ মোকাবেলা করে, আমি এখন পর্যন্ত টিকে আছি। এই মহা বিপাদের কাছে আমার নতুন বিপদ ত আসলে কিছুই না 🙂 তখন মনের ভিতর সাহস পাই, নতুন বিপদ সহজেই কাটিয়ে উঠি 😀
 
ধন্যবাদ!

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *