হাড্ডি যখন আছে, মাংস একদিন লাগবেই, একাউন্ট যখন আছে, ডলার একদিন……
অনেক দিন পর আবার আপনাদের মাঝে ফিরে আসলাম। দীর্ঘ এই সময়ে আমি আপনাদের খুব মিস করেছি, আমি জানি আপনারাও আমাকে অনেক মিস করেছেন। কারন দেশে আসার পর ইনবক্সের উত্তর দিতেই আমার প্রায় দুইদিন লেগেছে
আমার হজ্জে যাবার কথাটা গোপন রাখতে চেয়েছিলাম। কারণ ব্যাপারটা একান্তই ব্যাক্তিগত ছিল। কিন্তু Faisal Mustafa ভাই গ্রুপে সেটা ফাঁস করে দিলেন, কি আর করার আমি তার অনেক কাছের একজন, তাই ভালবাসার টানে কিছু করতে পারলাম না। অন্য কেউ এটা করলে তার খবর ছিল জাস্ট মজা করলাম
তবে এটা আমার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের একটা সাফল্য বটে। আমি আর আমার আম্মার পুরো হজ্জের টাকা এই ফ্রিল্যান্সিং থেকেই জমিয়েছি। একটা টাকাও বাহিরের না। গত প্রায় তিন বছর রাত দিন প্ররিশ্রম করেছি শুধু মাত্র মনের এই ইচ্ছা পূরণ করার জন্য। আপনারা দোয়া করেছেন এবং আল্লহ কবুল করেছেন এর জন্য আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কোন ভাষা নেই।
উপরের হেডিং নিয়ে যারা বেশ বিভ্রান্ত, তাদের বিভ্রান্তি দূর করি। ফ্রিল্যন্সিং করার আগে একটা চাকরীতে ছিলাম। অফিস পলিটিক্সে পড়ে, পানিশমেন্ট হিসেবে আমাকে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রায় চার মাস থাকতে হয়েছিল। সেখানে এমন কোন পরিশ্রমের কাজ নেই যা আমি করিনি। তবে জীবনের অনেক কিছু সেখান থেকে শিখেছি। সেগুলো এখন কাজে লাগছে। ত সেখানে প্রায় প্রতিদিনই নতুন কেউ আসত, আবার পুরাতন কেউ পোস্টিং নিয়ে চলে যেত। একদিন রানা নামের ২৪/২৫ বছরের একটা ছেলে এল। বেচারার শরীর স্বাস্থ্য দেখে অনেক মায়া হল। দেহে মাংস কিছু নেই বললেই চলে। মেডিকেলের স্টুডেন্টরা একে পেলে অনেক খুশি হত বিনামুল্যে হাতে কলমে হড্ডি গুড্ডির অনেক কিছু শিখতে পারত। তার স্বাস্থ্যের এই করুন অবস্থা দেখে সবাই তাকে নিয়ে মজা করত। উত্তরে সে একটা কথাই বলত “হাড্ডি যখন আছে, মাংস একদিন লাগবেই” প্রায় এক মাস আমাদের সাথে থেকে, সে একটু দূরে অন্য জায়গায় পোস্টিং নিয়ে চলে গেল টিচার হিসাবে। এই এক মাসের অমানুষিক পরিশ্রমে তার অবস্থা আরও করুন হয়েছিল সেটা বলাই বাহুল্য
প্রায় দেড় মাস পর অফিসের একটা কাজে তার এলাকার দিকে গেলাম। পাহাড়ের মধ্য দিয়ে হেটে যাচ্ছি, হঠৎ পাহাড়ের উপর থেকে কে যেন আমার নাম ধরে ডাকছে। কাছে যেয়ে ঠিক চিনতে পারলাম না। এবার সে তার পরিচয় দিল।এ যে দেখি আমাদের রানা ভাই খেয়ে দেয়ে বেশ নাদুস নুদুস গোলগাল চেহারা হয়েছে। ভাঙ্গা গাল অনেকটাই ভরাট হয়ে গেছে। এমনকি ছোটখাট একটা ভুঁড়ি জামার ভিতর থেকে উঁকি দিচ্ছে। আমার অবাক হওয়া দেখে সে সেই কথার পুনরাবৃত্তি করল “কি বলেছিলাম না হাড্ডি যখন আছে, মাংস একদিন লাগবেই”।
আমার অবস্থা অনেকটাই এই রকম। হজ্জে যখন যাই তখন সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে চলে গিয়েছিলাম। আমার একাউন্ট আর থাকবে না এটা এক রকম নিশ্চিত হয়েই গিয়েছিলাম। মক্কায় যেয়ে প্রথম যে কাজ করেছি তা হচ্ছে মোবাইল থেকে Fiverr আর FaceBook আপস ডিলিট করা। কারণ আমার মনে হয়েছে যে, এসব আমার ইবাদতের মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটাবে। আর যে হারে অর্ডার ক্যান্সেল করেছি তাতে আমার নামে অনেকগুলো রিপোর্ট যাবার কথা। আর যাবার আগে বায়ারের কমপ্লেনের কারনে Fiverr থেকে ভাল একটা ওয়ার্নিং খেয়েছিলাম। কাজেই ধরেই নিয়েছিলাম এখানেই সব শেষ
দেশে আসার কিছুদিন আগে একজনকে রিকোয়েস্ট করলাম আমার একাউন্ট চেক করার জন্য। সে চেক করে জানাল একাউন্ট দেখা যাচ্ছে। তার পরেও ঠিক ভরসা পাচ্ছিলাম না। দেশে এসে ভয়েতে দুইদিন পিসি ওপেন করিনি যদি খারাপ কিছু দেখি। আল্লাহর উপর ভরসা করে একাউন্ট খুললাম, দেখি একাউন্ট আছে (শোকর আলহামদুল্লিল্লাহ!) কোন বায়ার রিপোর্ট করেনি, Fiverrও কোন ওয়ার্নিং দেয়নি শুধু আছে অনেক গুলো বায়ারের মেসেজ। তারা আমাকে অনেক মিস করছে। অনেক অনেক ভাল লাগল।
কয়েকদিন ধরে আবার শুরু করেছি। সেই আগে অবস্থা নেই। মনে হচ্ছে ২০১৪ সালে আবার ফিরে গেছি। যখন কাজ শিখতাম আর পাশাপাশি Fiverr এ চোখ রাখতাম। একটা ৫ ডলারের অর্ডার পেতাম আর সেকি আনন্দ! কাজ আগে মত আর নেই, তাই এই অফুরন্ত সময়টাকে কাজে লাগাচ্ছি। নতুন কাজ শিখছি, যেটার সুযোগ গত তিন বছরে পাইনি। রানা ভাইয়ের মত করে বলতে চাই “একাউন্ট যখন আছে, ডলার একদিন আসবেই।” আর না আসলেও আফসোস নেই। আল্লাহর দুনিয়া অনেক বড়, রিজিকের মালিক আল্লাহ! কোন একটা ব্যাবস্থা হয়ে যাবেই। সবার নিকট দোয়া চাই। ভাল থাকবেন।
ধন্যবাদ!