বিতর্ক সমাচারঃ ফেসবুক ওয়াল বনাম বাথরুমের ওয়াল!
একটা গল্প মনে পড়ে গেল, অনেক দিন আগের কথা তখন ফেসবুক বলে কিছু ছিল না। আসলে ইন্টারনেট বিষয়টাই তখন নতুন। এলাকার এক টাউট বাটপাড় প্রকৃতির লোক ছিল। তার যন্ত্রণায় এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। সে গর্ব করে বলত তার বাড়িতে কেউ কোন দিন চুরি ডাকাতি করার সাহস পাবে না। আসলে পারবে কি করে, সেত এই কাজ ভাল জানে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে, এই লোকের বাড়িতে চুরি হল। সকাল বেলা তার বৌয়ের চিৎকার চেঁচামেচিতে বেচারার ঘুম ভেঙ্গে গেছে। বউকে জিজ্ঞেস করল কি সমস্যা, বউ বলল বাসায় চুরি হয়েছে। বেচারার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল, এটা কিভাবে সম্ভব। তার বাসায় চুরি হয়েছে এটা সে মেনে নিতে পারছে না। বাহিরে লোক জনের ভিড়, সবাই হাসাহাসি করছে। কি ব্যাপার? ব্যাপারটা আসলে কিছু না, রসিক চোর বাসার সামনের দেয়ালে লিখে দিয়ে গেছে, তোর বাসায় চুরি করে বীরের মত চলে যাচ্ছি, পারলি না তো ঠেকাতে!
আপনাদের দোয়ায় গত ১৫ দিন ধরে আল্লাহর রহমতে ভাল সময় কাটছে। বিষয়টা আর কিছুই না, আমার ফেসবুকের নিউজফিড উধাও হয়ে যাওয়াতে এখন আর বিকৃত মানুষের নেগেটিভ পোস্ট পড়া লাগে না, অযথা বিতর্কও দেখা লাগে না। এর উপরে একটা পোস্ট কয়েকদিন আগে দিয়েছিলাম। ধন্যবাদ জানাই Md Khairul Islam Apon ভাইকে “Kill News Feed” নামের এই চমৎকার এক্সটেনশন এর খোঁজ দেয়ার জন্য। এটা ইন্সটল করার পর আমার ফেসবুকে নিউজ ফিড উধাও হয়ে গেছে। আমার একবারের জন্যও মনে হয়না এটা ইউজ করে ভুল করেছি। অনেক মানসিক প্রশান্তিতে আছি। এখন শুধু মেসেঞ্জারে দরকারি আলাপ করি আর আমার দরকারি গ্রুপগুলতে ঢু মারি। অনেক সময় বেঁচে যাচ্ছে।
বলছিলাম ফেসবুকের বিতর্কের ব্যাপারে। কিছু বিকৃত মস্ত্রিস্কের লোকের কাজই হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের আজেবাজে পোস্ট দেয়া, আর কমেন্টে আজেবাজে জিনিস লিখে বিতর্ক উসকে দেয়া। আমরা আম জনতা না বুঝেই এসব বিতর্কে জড়িয়ে পড়ি। মজা নেয় সেই সব বিকৃত মস্ত্রিস্কের মানুষেরা। খেয়াল করে দেখবেন পাবলিকপ্লেসের বাথরুমে অনেকেই আজে বাজে জিনিস লেখে। যারা এসব লেখে তারা নিঃসন্দেহে শিক্ষিত এবং বিকৃত মস্ত্রিস্কের লোক। কারন শিক্ষিত না হলে লিখতে পারত না, আর বিকৃত মস্ত্রিস্কের লোক না হলে এসব লিখত না। আমরা পারত পক্ষে চেষ্টা করি এসব না পড়ার। কিন্তু যেহেতু বাথরুমে বেশ অনেকটা সময় থাকতে হয়, তাই না চাইলেও অনেক সময় এসব চোখে পড়ে যায়। তখন মনটা খারাপ হয়ে যায়, নিজেকে অপরাধী মনে হয়। বেশ অনেক বছর আগের কথা। তখন মার্কেটিং এ চাকরি করি। এক মেডিকেল সেন্টারের বাথরুমে ঢুকেছি।। না চাইলেও দরজার বোর্ডের দিকে চোখ চলে গেল। কারন আর কিছুই না।দরজায় অনেক কিছু হিবিজিবি লেখা। না চাইলেও কৌতূহলে অজান্তে পড়া শুরু করলাম। ভেবেছিলাম কেউ মনে হয় প্রেমপত্র লিখেছে। কিন্তু না, এদেখি বিতর্ক 🙂 বেশ কয়েকজনে বিতর্ক করছে। এমনকি কয়েক জনের একাধিক মন্তব্য দেখলাম। মানে এই বিতর্কে অংশগ্রহণের জন্য সেই ব্যাক্তি এই বাথরুমে বেশ কয়েকবার এসেছে। বিতর্ক করতে হবে না 🙂
বিষয়বস্তু আর কিছুই না। এক ব্যাক্তি তার নাম আর মোবাইল নাম্বার দিয়ে, নিচে লিখেছে ভালবাসা চাই। এরপরে এক ব্যাক্তি তার নিচে লিখেছে, আরে ভাই এটাত ছেলেদের টয়লেট, আপনি ভুল করেছেন, এসব মেয়েদের টয়লেটে লেখেন। কারন এখানে মেয়েরা আসে না, তারা আপনার লেখা পড়বে না। আরেকজন তার নিচে লিখেছে, আরে ভাই আপনিত দেখি খারাপ লোক, একজনকে খারাপ পরামর্শ দিচ্ছেন। আরেকজন লিখেছে আরে ভাই সেত ঠিক লিখতেই পারে, কারন সে হয়ত “গে” 🙂 আরকজন লিখেছে না বুঝে আরেকজনকে কেন অপমান করেন 🙂 আর পরে আরও অনেক কিছু, পুরা দরজায় এসব হাবিজাবি বিতর্ক লেখা। আগেই বলেছি হাতের লেখা দেখে বুঝলাম কয়েকজন একাধিকবার মন্তব্য লিখেছে। মানে শুধু এই বিতর্কের জন্য তাকে বেশ কয়েকবার টয়লেটে আসতে হয়েছে, বেচারারা 🙁
আমরা সাধারন পাবলিকেরা যারা প্রয়জনে পাবলিক টয়লেটে যাই, তারা এসব দেখে বিরক্ত হই আর মানসিক অশান্তিতে ভুগি। তখন ফেসবুক এত সহজলভ্য ছিল না। তাই সেই বিতর্ক টয়লেটের দেয়ালে ছিল। এখন ফেসবুক সবার হাতে হাতে। টয়লেটের সেই বিতর্ক এখন ফেসবুকে স্থানান্তরিত হয়েছে। নোংরামি আগের থেকে আরও বেড়েছে। আমার মত সাধারন পাবলিক এসব দেখে বিরক্ত হই আর মানসিক অশান্তিতে ভুগি। প্রয়জনেই আমাদের ফেসবুকে আসতে হয়। যেমন আমি আসি আমার পেশাগত কারনে। কিন্তু এসব অযথা বিতর্ক আর পোস্ট দেখে আমাদের মানসিক শান্তি নষ্ট হয়। আশার কথা হচ্ছে এসব থেকে বাঁচার উপায় আছে, যেটা আমি পোস্টের শুরুতে বলেছি। মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে আমাদের আরও যত্নবান হওয়া উচিৎ। কারন মন ভাল থাকলে শরীর ভাল থাকে, কাজে উৎসাহ বাড়ে!
সবাই ভাল থাকবেন। ধন্যবাদ!