এখন যে শীতকাল
এই বছর, প্রচন্ড শীত পড়ছে। যেহেতু গ্রামি থাকি, তাই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি, এখন আসলেই শীতকাল! আগে শুনতাম ঢাকাতে শীতের সময়ও, রাতে ফ্যান ছাড়া ঘুমানো যায় না 😉 ঢাকার মানুষের সুখ দেখে হিংসায় গাঁ জ্বলে যেত 😀 কিন্তু এই বার তারাও, শীত ভাল করে টের পাচ্ছে, কাজেই এবার আর এত হিংসে হচ্ছে না।
কথায় আছে তিন প্রকারের পুরুষ হচ্ছে বোকা
১। বোকা সেই পুরুষ, যে বর্ষাকালে ছাতা ছাড়া বাহিরে যায়।
২। বোকা সেই পুরুষ, যে দাওয়াত খেতে বসে, খেতে লজ্জা করে।
৩। বোকা সেই পুরুষ, যে শীতকালে বউকে বাপের বাড়ি পাঠায়।
আশা করি আমার ভাবীরা সবাই বাসাতেই আছে, আমার ভাইয়েরা, তাদের বাপের বাড়ি যেতে দেয়ার মত ভুল করেনি 😀 কয়েকদিন আগে বউ বাপের বাড়ি থেকে ঘুরে আসল। না ভাই আমাকে এত বোকা ভাবার কোন কারন নেই। আমিও সাথে গিয়েছিলাম 😀 শ্বশুর বাড়িতে জামাই আদরের পাশাপাশি, বোনাস হিসেবে যেটা পেলাম, সেটা হচ্ছে, ঠাণ্ডা কাশি। কারন ঘোরাঘুরির কারনে ঠাণ্ডা লেগে গেছে। ফলে এখন সারাক্ষণ কাশাকাশি চলছে। কাশতে কাশতেই লিখছি 🙁
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু কতটুকু এগিয়েছে সেটা কি আমারা জানি? সেটা জানতে হলে গ্রামে আসতে হবে। একটা উদাহরণ দেই, কয়েক বছর আগে, এই রকম শিতের সময়ে, গ্রামের কিছু উদ্যমী যুবক ঠিক করল, তারা দরিদ্রদের মধ্যে কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ করবে। যথারীতি তারা বেশ কিছু পুরাতন কাপড় সংগ্রহ করল। রীতিমত মঞ্চ বানিয়ে অনুষ্ঠান করে শীতবস্ত্র বিতরণ করবে। কিন্তু আপানারা বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, একজন মানুষও কাপড় নিতে আসেনি। এমনকি জোর করেও দেয়া যায়নি। কারন পুরাতন কাপড় নিয়েছে শুনলে সবাই ছি ছি করবে। অথচ ৬/৭ বছর আগেও দেখেছি একটা শিতের কম্বলের জন্য সেকি কাড়াকাড়ি।
বিয়ের সাথে সাথে চাকরীতে প্রমোশন পেলাম। সবাই বলল আমার বউ ভাগ্য অনেক ভাল। প্রোমোশনের পর আমার প্রথম পোস্টিং ছিল রংপুরে। কিছুদিন পরেই শীত পড়া শুরু হল। আমি পাত্তা দেইনি। কিছুদিন পরে বুঝলাম, এই শীত সেই শীত না। শীতে হাড্ডি পর্যন্ত জমে যায়। তাড়াহুড়া করে বিশাল একটা লেপ বানালাম। মজা করে দোকানদারকে বলেছিলাম, এমন লেপ বানাবেন যেন কমপক্ষে ৬ জন থাকা যায়। সে যে এটা সিরিয়ালি নেবে কে জানত। সে আসলেই বিশাল একটা লেপ বানিয়ে দিল, যাতে অনায়াসে ৬ জন বড় মানুষ থাকা যায়। এত বড় লেপ দেখে আমি পুরা আবুল হয়ে গেলাম। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমরা এখন আসলেই ৬ সদস্যের বড় পরিবার। সেই বিশাল লেপের মধ্যে প্রচন্ড ঠাণ্ডায়, আমার দিনগুলো একাকী নিঃসঙ্গ ভাবে কাটতে লাগল। কারন নিয়ম আছে, নতুন বউকে নাকি বিয়ের পরে, একাকি বাহিরে পাঠানো যায় না। তাই মা নতুন বউকে তার কাছেই রেখে দিলেন। বিয়ের পর প্রথম শীত এভাবে একাকীই কাটবে, ধরেই নিলাম। দুই দিনের ছুটিতে বাড়িতে গেলাম, আমার করুন চেহারা দেখে, আমার মায়ের মনে, একটু দয়া হল। বউকে আমার সাথে, কিছু দিনে থাকার অনুমতি দিল, যেন সে আমার যত্ন নিতে পারে। সেই শীতের কথা আমার আজীবন মনে থাকবে। সেই আনন্দের কথা আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
গত কয়েকবছর ধরেই শীতে নতুন একটা জিনিস চালু করেছি। আর সেটা হচ্ছে বারবিকিউ পার্টি। মানে কয়লার আগুনে চিকেন ঝলসে, সস, সালাদ, আর রুটি দিয়ে খাওয়া। যেটা আপনারা অনেকেই করেন। আগে গরুর খাবার দেয়ার ছোট একটা চারি ইউজ করতাম। পরে ইউটিউব দেখে, ছোট ড্রাম কেটে, ফ্রেম বানিয়ে প্রফেশনাল বারবিকিউ গ্রিল বানিয়েছি। এখন আমার গ্রিল আগের থেকে আরও ভাল হয়। আগে নরমাল রুটি বানানো হত। ইউটিউব দেখে এখন আমার বিবিজান, এখন সুন্দর তন্দুর রুটি বানাতে পারে। মজা এখন দ্বিগুণ, জয় হোক ইউটিউবের 🙂 সন্ধার পর কাঠ কয়লা দিয়ে আগুল জালানো হয়। আগুন গনগনে হয়ে উঠলে, এর উপর গ্রিল ফ্রেম দেয়া হয়। গ্রিলের উপর মেরিনেট করা চিকেন দেয়া হয়। নেট ঘেঁটে রেসিপি বের করেছি। আমি এতটুকু বলতে পারি আমার গ্রিল চিকেন হোটেলের দোকানের থেকে হাজার গুন ভাল। সবার দাওয়াত রইল। বছর দুই আগে, আমার কাছের ছোট দুই ভাই, ঢাকা থেকে বেড়াতে এসেছিল। রাতে আমরা BBQ পার্টি করেছিলাম। আগুনের পাশে বসে অনেকক্ষণ গল্প করেছিলাম। বিশেষ একটি দিন ছিল। গত বছর ক্যাম্পিং তাবু কিনেছি। এখন মজা আরও বেড়ে গেছে, কারন BBQ করার পর, রাতে তাবুতে বসে গরম গরম গ্রিল খাওয়া যাবে। চাইলে রাতে থাকাও যাবে। আপনাদের আবারো দাওয়াত দিলাম।
আমার বাচ্চারা BBQ খুবই পছন্দ করে। শিতের রাতে আগুনের চারপাশে গোল হয়ে বসে গ্রিল চিকেন খাওয়ার মজাই আলাদা। বাচ্চাদের পিড়াপিড়িতে এখন রেগুলারই এই পার্টি করতে হয়। মনে আছে আমার বড় ছেলে একবার বায়না ধরল পার্টি দেয়ার। আমি রাজি হলাম না। অজুহাত দিলাম টাকা নেই। আমার ছয় বছরের বাচ্চা, তার এক বছরের জমানো ৬০০ টাকা, আমার হাতে তুলে দিয়ে বলল, বাবা এই টাকা দিয়ে পার্টি দাও। বুঝেন তার আগ্রহ। ফলে সেদিন আমার বাবার টাকা দিয়ে, আমরা গ্রিল চিকেন পার্টি দিলাম। গর্বে আমার বুক ভরে উঠল। সেই শিতে সেটা ছিল, আমার সব থেকে বড় উপহার।
এই বারের শীত সবার আনন্দে কাটুক এই কামনায় শেষ করছি। সবাই ভাল থাকবেন। শরীরের যত্ন নেবেন।
ধন্যবাদ!