অনলাইন প্রতারণা: ইনবক্সে আসেন

বিষয়টি সবাই কম বেশি জানেন। পোষ্টটি মুলত নতুনদের জন্য। কারন তারা এই ধরনের প্রতারনায় বেশি পড়েন। যারা আমার মত সাত ঘাটের পানি খাওয়া পুরান মাল, তাদেরকে ইনবক্সে ডেকে নিয়ে প্রতারনা করা একটু কঠিন বটে, তবে আসম্ভব কিছু না, কারন প্রতারকদের কথা অনেক মিষ্টি হয়, আর তাদের আত্মবিশ্বাস অনেক প্রবল থাকে।  ফলে অনেক সময় অভিজ্ঞ লোকও প্রতারিত হয়। তাই ইনবক্সে অপরিচিত কারো সাথে লেনদেন করার আগে সাত বার ভাববেন। অনলাইনে কোন ধরনের আইন প্রয়োগ করা বেশ কঠিন। আর এই সুযোগটাই প্রতারকেরা নিয়েছে। ফলে অনলাইন প্রতারনা দিনকে দিন হু হু কর বাড়ছে। 
আমি বলব কেউ যদি হেল্প করার নামে ইনবক্সে আসার জন্য আহবান করে, এমনকি সে যদি আমিও হই, তবে বলব দুইবার ভাবতে। এই দেশ প্রতারকদের জন্য আদর্শ, এর অন্যতম কারন হচ্ছে আমাদের মধ্যে প্রচন্ড লোভ কাজ করে। অল্প বা বিনা পরিশ্রমে প্রচুর ইনকাম করতে আমরা সবাই এক পায়ে খাড়া। আর এই সুযোগ প্রতারকরা নেয়। অনলাইন প্রতারনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই আমি ইনবক্সে বিভিন্ন প্রতারনার কাহিনী পাই। আগে চেষ্টা করতাম যারা প্রতারিত হয়েছে তাদের কিছু মানসিক সাপোর্ট দেয়ার। কিন্তু পরে দেখেছি যারা প্রাতারিত হয় তাদের ৯৯% ই হচ্ছে নতুন এবং নিজেদের দোষেই প্রতারিত হয়েছে। হাজার হাজার টাকা দিয়ে টিউটোরিয়াল কেনার সময় কোন যাচাই করেনি। এখন প্রতারিত হবার পর তার বুদ্ধি খুলে গেছে। তাই এখন এদের মেসেজের কোন রিপ্লাই দেই না। কারন প্রতারিত হওয়া হচ্ছে এদের নিয়তি। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কয়েকটি প্রতারনার ঘটনা বলছি। 
ঘটনা-১ঃ
সাম্প্রতিক কালের একটা বাজে অভিজ্ঞতার কথা বলি। একটা বড় কাজের অফার পেয়েছিলাম, জুয়েলারি রিটাচিং এর। আমি সাধারণত এই ধরনের কাজ করি না।  জুয়েলারি রিটাচিং নিয়ে ঘাটতে যেয়ে একজনের খোঁজ পেলাম, যে জুয়েলারি রিটাচিং করে। তার কাজের ভিডিও দেখলাম! ভিডিওতে দেখলাম তার কাছে একটা ফাইল আছে, যেখানে জুয়েলারিতে ইউজ করার জন্য বেশ কিছু স্টোন এবং স্যাংক এর কালেকশন আছে। ফাইলটা পেলে আমার উপকার হত। তাকে নক দিলাম। সে আমাকে ইনবক্সে আসতে বলল। এবং এর পরে খেলা শুরু হল। অনেক মেসেজ চালাচালি করার পর সে জানাল এই ফাইল সে মাত্র ১৫ হাজার টাকা হলে দিতে পারবে। সে নাকি এটা ৪০০ ডলার দিয়ে কিনেছে। বুঝলাম সে পিওর একটা বাটপাড়! আসলে সে মনে করেছে, আমি মনে হয় মাত্র খেতের কাজ শেষ করে, থেকে হাত মুখ ধুয়ে, ফ্রিলান্সিং শুরু করেছি।  পরে সেই একই ফাইল আমি অনলাইন থেকে কালেক্ট করেছি। ঠিক মত খুজতে পারলে নেটে সব কিছুই পাওয়া যায়। অথচ নতুন কেউ হলে নির্ঘাত তার কাছ থেকে ফাইল কিনত। 
ঘটনা-২ঃ
ইদানিং আরেকটা ইনবক্স প্রতারনা ব্যাপক ভাবে শুরু হয়েছে সেটা হচ্ছে ডলার কেনা বেচা। এমনকি বড় বড় গ্রুপ তৈরি হয়েছে ডলার প্রতারনা করার জন্য। এদের ফাঁদে একবার যে পড়েছে, তার খবর আছে। কিছুদিন আগে এক ডলার প্রতারকের কাহিনী শুনলাম, সে ঢাকার পাশে গাজিপুএর থাকে। অনেকের সাথে ডলার প্রতারনা করেছে। তার একটা গ্যাং আছে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে! ডলার বিক্রি বা কেনার জন্য ইনবক্সে ডাকে। ভাল রেট দিতে চায়। এর পরে তার এলাকায় যেতে বলে, ফেস টু ফেস লেনদেনের জন্য। আর তার এলাকাতে গেলেই খেল খতম। তার গ্রুপ দিয়ে মারধর করে সব টাকা নিয়ে যায়। ভুক্তভুগির কিছুই করার নেই, কারন দেশের আইনে এভাবে ডলার কেনাবেচা করা অবৈধ।  আরেকটি বিষয় খেয়াল করেছি সেটা হচ্ছে, ইনবক্স প্রতারকদের ফেসবুক ওয়ালে প্রচুর ধর্মীয় এবং নীতি কথা মূলক পোস্ট দেখা যায়। এসব করে মুলত তারা মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেন। কাজেই এসব দেখলে সাবধান!
 
ঘটনা-৩ঃ
এবার এক বোকা প্রতারকের ইনবক্স প্রতারনার কাহিনী দিয়ে পোস্ট শেষ করব। এটা মাস দুয়েক আগের ঘটনা। একজন SEO এক্সপার্ট তার সার্ভিস দেশে দেবে বলে বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট দিয়েছিল। ব্রাক্ষনবাড়ীয়া থেকে একজন তাকে ইঙ্কবক্সে যোগাযোগ করে। তাকে বলে তার কিছু সাইট আছে যেগুলোর এসিও করে গুগলের প্রথম পেজে নিয়ে আসতে হবে। তিনি তার বাজেট বলেন। সেই প্রতারক তাকে তার জেলায় যেতে বলে, যেহেতু বাজেট বেশ বড়। সামনা সামনি আলোচনা করে বিষয়টি ফাইনাল করতে চায়। সে সরল বিশ্বাসে সেখানে যায়। তাকে একটা ফ্লাটের ঠিকানা দিয়ে সেখানে আসতে বলে। তিনি সেই ফ্লাটে যাবার পরপরই তাকে কয়েক জন ধরে ফেলে, চেয়ারের সাথে বেঁধে ফেলে। তার মোবাইল মানিব্যাগ কেড়ে নেয় 🙁 বেশ মারধরও করে। SEO এক্সপার্ট অনেক কাকুতি মিনতি করে, বলে ভাই আমার যা আছে নিয়ে নেন, কিন্তু আমাকে ছেড়ে দেন। জানে মারবেন না।
 
এবার ঘটল মজার ঘটনা। প্রতারক চক্র তাদের আসল রূপ বের করল। তাকে বলল ঠিক আছে, তোকে ছেড়ে দিতে পারি এক শর্তে, তুই আমাদের ৪ টা ওয়েব সাইট আছে, এগুলো গুগলের প্রথম পেজে এনে দিবি, সময় মাত্র ২৪ ঘন্টা, তাহলেই তোকে ছেড়ে দেবে 😀 SEO এক্সপার্ট পুরাই অবাক। সে বলল ভাই একটা সাইট, গুগলের প্রথম পেজে আনতে গেলে মিনিমাম ০৬ মাস লাগবে। প্রতারক বলল আমাদের সাথে মজা নাও >:( আমরা বুঝি SEO বুঝি না 🙂 দ্রুত সাইট রাঙ্ক করে দাও, না হলে খবর আছে, বলেই আবার মার 🙂 এভাবে অনেক ক্ষণ চলার পর প্রতারক চক্র বুঝতে পারল, মনে হয় কোথাও একটা ঘাপলা আছে। সাইট মনে হয় এত দ্রুত রাঙ্ক করানো যায় না। না হলে এত মাইর দেয়া হল, তার পরেও SEO এক্সপার্ট রাজি হয় না কেন 🙂 পরে সেই SEO এক্সপার্টকে এই ঘটনা কাউকে বললে খবর আছে বলে হুমকি দিয়ে, মোবাইল মানিব্যাগ ফেরত দিয়ে তাকে ঢাকার বাসে তুলে দেয়। SEO এক্সপার্ট ঢাকায় এসে ফেসুবকে একটা পোস্ট দিয়ে তার এই অসাধারন SEO সার্ভিস দেয়ার কাহিনী প্রকাশ করে দেয় 🙂
 
পরিশেষে বলব, ইনবক্সে যাবার আহবানে সাড়া না দিয়ে, আপনি যা চান তা একটু গুগল করে ঘাটাঘাটি করেন। দেখবেন আপনি যা যা চান তার সবই ওয়েবে দেয়া আছে। সহজেই পেয়ে যাবেন। আর আপনার নেটওয়ার্ক বড় করেন। আপনার ফ্রেন্ডলিস্ট আজেবাজে লোক দিয়ে না ভরে, কিছু এক্সপার্টদের আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে এড করেন। দেখবেন যা চান তা না চাইতেই পেয়ে যাবেন। তার পরে যদি কোন বিষয়ে জানতে চান তবে বিভিন্ন হেল্প গ্রুপে পোস্ট করেন। সবার মতামত নেন। এর পরে সিদ্ধান্ত নেন।
একটা কথা এড করতে চাই সেটা হচ্ছে বর্তমান আইসিটি আইন অনেক কঠোর এবং এর একটি ধারা আছে অনলাইন প্রতারনা সংক্রান্ত। কাজেই কেউ যদি ইনবক্সে প্রতারিত হন তবে সব কিছুর প্রমান সহ আইনের আশ্রয় নেবেন। দেখবেন প্রতারকের খবর হয়ে যাবে। আসলে একটু সাহস করলেই হয়
 
সবাইকে ধন্যবাদ!
 

Similar Posts