মাত্র ২ মিনিটের অনুশীলনে, বাড়ান আপনার মনযোগ

আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে ফ্রিল্যান্সিংএ একই ধরণের কাজ করে যাচ্ছি, তাদের কাজের প্রতি একঘেয়েমি চলে আসাটা স্বাভাবিক। এতে কাজের প্রতি মনোযোগ এবং আগ্রহ কমে যেতে পারে, ফলাফল প্রোডাক্টিভিটি আশঙ্কাজনক ভাবে কমে যাওয়া। আমিও গত ১ বছর ধরে, এই অবস্থার মোকাবেলা করছি। বলা যায়, এক ধরণের ডিপ্রেশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। এটা থেকে বের হবার জন্য, কাছের অনেকের পরামর্শ নিয়েছি। বিভিন্ন লেখা পড়েছি, ভিডিও দেখেছি। অনেক কিছু অনুশীলন করেছি, কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। এই অবস্থাটা আমার কাজের কি পরিমাণ ক্ষতি করছিল, সেটা বলে বোঝানো যাবে না। আপওয়ার্কে দুইটা পারমানেন্ট কাজ হাতছাড়া করেছি ইচ্ছা করেই। যে কাজ তিন দিনে করতে পারি, সেটা রিভিশন দিয়ে দিয়ে ৩৩ দিনে শেষ করেছি। মোটকথা হচ্ছে আমার অবস্থা অনেক করুন হয়ে পড়েছিল। তবে আশার কথা হচ্ছে, আমি এর থেকে বের হবার, একটা উপায় বের করেছি এবং এটা অনুশীলন করে উপকার পাচ্ছি। তাই ভাবলাম আপনাদের সাথে এটা শেয়ার করি। কারন আমি জানি, আমার মত অনেকেই, এই ধরণের সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তা হলে শুরু করা যাক। আমি অনেক ভেবে চিন্তে, যেটা ধরতে পারলাম সেটা হচ্ছে, আমার সমস্যার মুল মূলত দুইটি

১. কাজের প্রতি মনোযোগ কমে যাওয়া, ২. কাজের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া,

এক সময় কাজে বসলে, কখন দুই তিন ঘন্টা পার হয়ে যেত টেরিই পেতাম না। আর এখন একটা কাজ টানা ৫ মিনিট করতে পারি কিনা সন্দেহ। মুল কাজ বাদ দিয়ে, অন্য কাজ করি, মোট কথা, আজাইরা সময় নষ্ট করি। আর এভাবেই কাজের মনযোগ নষ্ট হয়। একটা ১ ঘন্টার কাজকে যদি ১০০ ইউনিট ধরি, তাহলে দেখা যাবে ফেসবুকে সময় দিতে গিয়ে ৩০ ইউনিট ব্যয় হল, ইউটিউবে অদরকারী ভিডিও দেখে আরও ২০ ইউনিট গেল, কারো সাথে চ্যাট করে আরও ১৫ ইউনিট গেল। গান শুনে গেল আরও ১০ ইউনিট, এভাবে যেতে যেতে দেখা যাবে যে, ৮৫-৯০ ইউনিট নষ্ট হয়ে গেছে। আসল কাজে ব্যয় হয়েছে মাত্র ১০-১৫ ইউনিট। অথচ যদি ১০০ ইউনিট আমরা আসল কাজে ব্যয় করতে পারতাম, তবে আমাদের প্রোডাক্টিভিটি কোন পর্যায়ে যেত সেটা সহজেই অনুমান করা যায়।

আজকে আমি মনোযোগ বৃদ্ধি করার একটা অব্যর্থ টেকনিক শেয়ার করব। আর সেটা হচ্ছে “২ মিনিট মনোযোগের অনুশীলন”। দিনে মাত্র ২ মিনিট করে, দিনে ১০-২০ মিনিট্ব এই অনুশীলন প্র্যাকটিস করে, আপনার মনোযোগের শক্তি সহজেই বাড়াতে পারবেন। এখন আসি এটা কিভাবে অনুশীলন করবেন। এটা খুবই সহজ একটি অনুশীলন, আপনাকে মাত্র ২ মিনিট ঘড়ির কাটার দিকে অখন্ড মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে থাকতে হবে। এই দুই মিনিট ঘড়ির কাটা ছাড়া অন্য কোন কিছু চিন্তা করা যাবে না। বিশিষ্ট সাধক মৌনী সাধু এই অনুশীলনের আবিস্কারক। এটার কার্যকারিতা প্রমানিত। প্রথমে বড় সেকেন্ডের কাটা রয়েছে, এমন একটি বড় দেয়াল ঘড়ি বা টেবিল ঘড়ির সামনে বসুন। এমন কিছু না থাকলে, বড় হাত ঘড়িও ইউজ করতে পারেন। তবে আমরা যেহেতু সব সময় ডেক্সটপ বা ল্যপটপের সামনে থাকি তাই চাইলে ডেক্সটপ এনালগ ঘড়ি ইউজ করতে পারি। আমি বর্তমানে এই ক্রোম এক্সটেনশন ইউজ করছি।

প্রথমে আপনার শরীর শিথিল করুন, বেশ কয়েকবার লম্বা শ্বাস নিন। সব কিছু থেকে মনোযোগ সরিয়ে একাগ্র হোন। মানসিক প্রস্তুতি শেষ হলে, ঘড়ীর সেকেন্ডের কাটার উপর আপনার মনোযোগ স্থির করুন। মাত্র দুই মিনিট আপনার সচেতনতা স্থির রাখুন সেকেন্ডের কাটার উপর। এমনভাবে মনোযোগ দিন, যেন এই মহাবিশ্বে সেকেন্ডের কাটা ছাড়া আর কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। অন্য কোন কিছু যদি আপনার মনোযোগে বিঘ্ন ঘটায়, তবে বিচলিত না হয়ে, আলতো ভাবে মনোযোগ সেকেন্ডের কাটায় ফিরিয়ে আনুন। পাক্কা দুই মিনিট আপনার পুরা মনোযোগ, সেকেন্ডের কাটার উপর রাখুন। দুই মিনিটের অনুশীলনে, আপনার মনোযোগের অবস্থা যাই হোক না কেন, আপনি খেয়াল করেছেন যে, কিছুক্ষণ পর পর আপনার মন, অন্য কোন কিছু নিয়ে ভাবতে চেয়েছে। আসলে নিস্ক্রিয় মনোযোগে জোর করতে হয় না। কিন্তু সক্রিয় মনোযোগে আপনার মনে জোর প্রয়োগ করতে হয়। মনোযোগ অন্য দিকে চলে গেলে বিচলিত হবেন না। আলতো করে মনোযোগ আবার ঘড়ির সেকেন্ডের কাটার উপর নিয়ে আসুন।

দিনে দুই মিনিট করে ২-৫ বার অর্থাৎ মোট ৫-১০ মিনিট এই অনুশীলন আপনি কয়েক সপ্তাহ চালাতে পারলে, আপনি দেখবেন যে, আপনার মনোযোগের অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। আপনি কোন দরকারি কাজে বসলে, শুধু সেটাতেই পুরা ফোকাস দিতে পারবেন। আপনার প্রোডাক্টিভিটি অনেক বাড়বে। আমি যেটা করি, পিসির সামনে বসার শুরুতেই এই দুই মিনিটের অনুশীলন করে, এর পরে কাজ শুরু করি। যতবার পিসির সামনে নতুন করে বসি, ততবার এই দুই মিনিটের অনুশীলন করি। এভাবে আমার দিনে ৫-১০ মিনিট অনুশীলন হয়ে যাচ্ছে। আপনারাও এটা ফলো করতে পারেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আপনি শুরু করার কয়েক দিন পর থেকে অনুভব করবেন যে, কাজটা দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে, এটার রহস্য হচ্ছে, সচেতন ভাবে অনুশীলন করার ফলে, আপনার মনোযোগের ব্যাপারে আপনি আরও বেশি জ্ঞান লাভ করছেন এবং কাজে লাগাতে পারছেন। এই অনুশীলন নিয়মিত করলে, আপনি সময়ের ব্যাপারে সচেতন হবেন, বুঝতে পারবেন সময়কে ধরে রাখা যায় না, তাই এর থেকে মুলবান কোন কিছু হতে পারে না। এটাকে ভাল কাজে ইউজ না করলে, শুধু শুধু অপচয় হবে। কাজেই সময়কে ভাল কাজে লাগাবার ব্যাপারে আপনার আগ্রহ আরও বাড়বে। আপনাদের দোয়ায় এই অনুশীলন শুরু করার পর থেকে আমার কাজের প্রতি মনোযোগ অনেক বেড়েছে। এই অভ্যাস ধরে রাখতে পারলে, আশা করি কাজের প্রতি মনোযোগ ১০০% ব্যাবহার করতে পারব। আশা করি এই অনুশীলন আপনি রেগুলার করবেন এবং তার ফলাফল আমাদের সাথে শেয়ার করবেন।
এতক্ষণ আলাপ করছিলাম, মনোযোগের ব্যাপারে, এবার আসি কাজের প্রতি আগ্রহের ব্যাপারে। কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর অনেক টেকনিক আছে। তবে আমি মনে করি টাকা হচ্ছে সব থেকে বড় মোটিভেশন (Money is the best motivation)। তবে ইনকাম অবশ্যই হালাল হতে হবে। রাস্তার ধারের ভিক্ষুকের নীতিকথা সে যতই ভাল হোক, আমরা সেটা গোনায় ধরি না। অথচ ধনকুবের জ্যাক মা, বা ইলন মাস্ক কোন কিছু বললে, সেটাকে আমরা কতটা মূল্যায়ন করি। আসলে এটাই নিয়ম। তাই আগে টাকা কামান এর পরে নীতিকথা শোনাবেন। তাহলে সবাই আপনার কথা মূল্যায়ন করবে।
আপনার কাজের লক্ষ্যগুলো কোথাও লিখে রাখেন, সেটা বার বার দেখেন, এতে কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। আপনি যে অবস্থায় আছেন সেটার জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন, আর এই নিয়ামত না থাকলে আপনার কি হত সেটা একটু কল্পনা করেন, কিছু দিন আগে টাকার অভাবে আমারদের এক ফ্রিল্যান্সার ভাই আত্মহত্যা করেছে, গত বছর আরেক ভাই, ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয় ইনকাম কমে যাওয়াতে, স্ত্রীর কাছ থেকে ডিভোর্স পেয়ে এবং অপমানিত হয়ে, একই ভাবে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন। তাদে জায়গায় আপনার নিজেকে কল্পনা করেন। আপনার কি ছোট একটা মেয়ে আছে? আপনি যদি দুনিয়াতে না থাকেন, কোন সম্পদ যদি না রেখে যান, তবে এই বাচ্চা মেয়েটাকে হয়ত মানুষের বাড়িতে কাজ করতে হতে পারে। আপনার ছোট ছেলেটা, আপনার অবর্তমানে টাকার অভাবে, হয়ত সাইকেলের গ্যারেজে পেটে ভাতে কাজ করতে হতে পারে। তাহলে আপনি কেন টাকা ইনকাম করবেন না? কেন কেন বেশি বেশি কাজ করে, টাকা ইনকাম করে, আপনার পরিবারের নিরাপত্তা আগে নিশ্চিত করবেন না? কুকুরের লেজে আগুন লাগিয়ে দিলে, সে যেমন পাগলের মত দৌড়ায়, আপনার চিন্তা ধারার এই সামান্য বদল, কাজের প্রতি আপনার আগ্রহ হাজার গুন বাড়িয়ে দেবে। সত্যি বলতে আমি এভাবেই চিন্তা করছি। আমি এখন নতুন করে শুরু করার অনুপ্রেরণা পাচ্ছি। এই দুনিয়াতে দরকারের সময় কাউকে কাছে পাবেন না। আপনার ভাল ইনকাম আছে, এইজন্য সবাই সম্মান করে সমীহ করে। আপনার যখন টাকা থাকবে না, তখন দেখবেন দুনিয়ার আসল রূপ। তাই টাকার অপব্যায় না করে, সঞ্চয় করুন, হালাল ভাবে বেশি বেশি ইনকাম করুন। কাজের প্রতি আগ্রহ অনেকগুণ বেড়ে যাবে।
পরিশেষে বলব, কাজকে ভালবাসুন কাজের প্রতি মনোযোগ দিন, কাজই হোক আপনার আনন্দের উৎস।
সবাই ভাল থাকবেন।
ধন্যবাদ!

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *