ফ্রিলান্সারের অর্জন, বায়ারের সাথে দেখা হওয়া
আমরা যারা অনলাইন ফ্রিলান্সিং এর সাথে জড়িত, তারা এক ধরনের ভার্চুয়াল জীবন যাপন করি। বায়ারের সাথে কাজ করতে করতে, যখন একটা ভাল রিলেশন হয়ে যায়, তখন মনে মনে তার ব্যাপারে একটা ছবি আঁকি। সেটাকেই বাস্তব ধরে এগিয়ে যাই। যেমন কোন বই পড়ার সময় বইয়ের চরিত্র গুলো আমরা মনে মনে আঁকি। কিন্তু বাস্তবে বায়াররা কি আমরা যেভাবে দেখি তেমন হয়? হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। না হবার সভবনাই বেশি। সেদিন একজনের লেখা পড়ে খারাপ লাগল, সে ফিমেল মনে করে, এক বায়ারের সাথে দীর্ঘদিন কাজ করে যাচ্ছিল। পরে দেখে বায়ার আসলে পুরুষ 🙂 আহারে বেচারা, এমন আসলে হতেই পারে।
বলছিলাম বায়ারের সাথে সরাসরি দেখা করার কথা। আমার মতে এটা একজন ফ্রিলান্সারের জন্য অনেক বড় একটা অর্জন। খুব কম ফ্রিলান্সারেরই ভ্যাগে জোটে, বায়ারের সাথে সরাসরি দেখা করার। আমার জানা কয়েকটি ঘটনা শেয়ার করছি।
ঘটনা ১ঃ
তিনি আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আছেন। গল্পটা আমাকে বলেছিলেন গত বছর। তার এক রেগুলার বায়ার হঠাৎ করেই তাকে বলল যে, সে ট্যুর করতে বের হয়েছে, এবারের ইচ্ছা , ভারতীয় উপমহাদেশ ভ্রমন করার। কয়েক দিন বাংলাদেশে থাকবে। তার সাথে দেখা করার আমন্ত্রণ জানাল। সে, সেই সুদুর বরিশাল থেকে লঞ্চে করে ঢাকায় এসে, বায়ারের সাথে দেখা করে। একটা দামি রেস্টুরেন্টে বসে, অনেকক্ষণ গল্প হয়। বায়ার তার জন্য একটা সুন্দর দামি টর্চলাইট উপহার হিসেবে এনেছিল।
ঘটনা ২ঃ
এটাও ফ্রেন্ডলিস্টের আরেকজনের গল্প। তার সেই বায়ারের সাথে দীর্ঘদিন গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে কাজ করছিল। বায়ারের বাংলাদেশে গার্মেন্টসের পার্টনারশিপের বিজনেস আছে। বিজনেস ডিল করার জন্য সে বাংলাদেশে এসেছিল। বায়ার তাকে তার সাথে দেখা করার আমন্ত্রণ জানায়। সে ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে বায়ারের সাথে দেখা করে। এক সাথে ডিনার করতে করতে অনেক গল্প হয়। বায়ার মিটিং করার সময়, তার এদেশি সব পার্টনারদের সাথে তার পরিচয় করিয়ে দেয়। এটা এই বছরের শুরুর দিকের ঘটনা।
ঘটনা ৩ঃ
এই গল্প কয়েকদিন আগে একজনের কাছ থেকে শুনেছিলাম। তার পরিচিত এক বড় ভাই খুব ভাল UX/UI ডিজাইনার। এক USA কোম্পানিতে ভাল স্যালারিতে রিমোট জব করত। তার বস তাকে এতটাই পছন্দ করতে যে, তাদে অফার দেয় তাদের USA অফিসে বসে তার সাথে, সরাসরি কাজ করার । সেও আর কাল বিলম্ব না করে রাজি হয়ে যায়। সে এখন H-1B প্রফেশনাল ভিসা নিয়ে স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় অবস্থান করছে। সব ব্যাবস্থা তার বায়ার করে দিয়েছে। এখন তার বায়ারের সাথে নিশ্চয়ই প্রতিদিন দেখা হয়।
ঘটনা ৪ঃ
এটা আমার নিজের গল্প এবং একটা নিদারুন বার্থতার গল্প। আমার এক রেগুলার UK বায়ার, যার গল্প এর আগেও করেছি। গত বছর ব্যাবসার জন্য বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। বলেছিল সে অবশ্যই আমার বাসায় আসবে। কয়েক দিন থাকবে এবং বাংলাদেশ ঘোরাঘুরি করবে। আমিও খুব এক্সাইটেড ছিলাম। বাসার সবাইকে বলেছি যে আমার এক বিদেশি বায়ার বেড়াতে আসবে। ইচ্ছা ছিল তাকে নিয়ে ঘোরাঘুরি করার। কিন্তু আফসোস তার শিডিউল পিছাতে পিছাতে, এই বছর প্রায় পার হয়ে গেল 🙁 কয়েকদিন আগে সে জানাল, আপাতত তার ট্যুর ক্যান্সেল। কারন এই দেশি পার্টনারের সাথে আর্থিক ব্যাপারে মিলছে না। সে ঠোঁটকাটা লোক, বলেই ফেলল, সেই সুদুর UK থেকে, এত বেশি প্লেন ফেয়ার দিয়ে, শুধু আমার সাথে দেখা করতে আসা, তার জন্য পোষাবে না। মনটাই ভেঙ্গে গেল। একবার মনে হচ্ছিল তাকে বলি, প্লেন ফেয়ার আমি দেব, ব্যাটা তুই আয় >:( বহু কষ্টে আবেগকে সামলালাম। কারন আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। পেটের চিন্তা আগে করতে হবে।
তবে স্বপ্ন দেখি, আমার প্রিয় কোন বায়ারের সাথে, ডিনার করতে করতে গল্প করছি। ঘুরে বেড়াচ্ছি সুন্দর কোন জায়গায়। অভিজ্ঞতা বিনিময় হচ্ছে, হয়ত হচ্ছে বড় কোন ডিল। আর দেখাটা যে বাংলাদেশই হতে হবে এমন নয়। এমন কি হতে পারে না যে, আমিই তার সাথে দেখা করতে রওয়ানা দিচ্ছি 🙂 থাক, আর দিবাস্বপ্ন দেখে লাভ নেই। আজকে এই পর্যন্তই। আমি জানি আপনারও হয়ত বায়ারের সাথে দেখা করার অভিজ্ঞতা আছে। বলেন না সেই গল্প কমেন্টে, আমরাও একটু জানি।
ধন্যবাদ!