মজার অভিজ্ঞতাঃ বৌয়ের বুদ্ধি সমাচার!
জীবন চলার পথে অনেক মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে। বন্ধুদের সাথে আড্ডায় সেগুলো অনেকটা রান্নার মশলার মত কাজ করত। কিন্তু অনলাইন জীবন বেছে নেয়াতে, এখন আর আড্ডা দেয়াই হয় না। ফলে সেই মজার অভিজ্ঞতাগুলোয় ধুলো জমা হয়েছে। হয়ত সব ভুলে যাব। তাই ভাবলাম কয়েকটা মজার গল্প শেয়ার করি। সৃতি হিসেবে রয়ে যাবে।
গল্প-১
কথায় আছে পৃথিবীতে দুই ধরনের পুরুষ আছে এক জীবিত আর বিবাহিত 🙂 অনেক স্বামীকে দেখেছি বউয়ের কথায় উঠতে আর বসতে। একটা গল্প মনে পড়ে গেল। আমার আব্বা পুলিশে চাকরী করতেন। তখন আমরা একটা জেলা শহরে থাকি। জেলার নতুন এসপি সাহেব লোক ভাল না। হালুয়া রুটির মত ঘুষ খায়, সেটা ঠিক আছে। কারন তারা এটা খাবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা আরও আছে। বিশেষ করে তার মুখ খুবই খারাপ। হেন কোন গালা গালি নেই যেটা তার কালেকশনে নেই। খুবই বদমেজাজি আর কড়া লোক। পান থেকে চুল খসলে কোন কথা নেই, সাথে সাথে শাস্তি। তাই সবাই তার ভয়ে টতস্ত থাকে। মানে তার ভয়ে বাঘ মহিষ এক ঘাটে পানি খায় আরকি 😀
সেদিন প্রচণ্ড গরম পড়েছে। একজন পুলিশের লোক সিভিল ড্রেসে সাইকেল চালিয়ে তার বাংলোর সামনে দিয়ে অফিসে যাচ্ছে। এসপি সাহেব খালি গায়ে ব্যাল্কনিতে দাড়িয়ে আছে। সাইকেলওয়ালাকে দেখে হুংকার দিয়ে থামতে বলল। সে থামল, এসপি সাহেব দাঁত মুখ খিচিয়ে, বিশ্রী ভাষায় মা বাপ তুলে তাকে গালি দিল। পুলিশও ঘাবড়ে না গিয়ে, তাকে পাল্টা জিজ্ঞেস করল, গালাগালি কেন দিলেন স্যার? এবার আরও খেপে গিয়ে, গালি দিয়ে বলল, আমার বাংলোর সামনে দিয়ে কেন সাইকেল চালিয়ে গেলি? হেটে কেন গেলি না? পুলিশেরও মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। সে বলল, এটা করতে হবে কোন আইনে আছে, সেটা দেখান? এবার মনে হয় এটম বোমা বাস্ট হবে, এসপি সাহেব দাঁত মুখ খিঁচিয়ে, দুই হাত নাড়িয়ে, কিছু একটা বলতে যাবেন, ঠিক এমন সময় ঘর থেকে তারা স্ত্রি, বলে উঠল জাহিদ (ছন্দনাম) এসব কি চেঁচামেচি শুরু করলে? এসো, ঘরে এসো!
জোঁকের উপর লবণ দিলে যেমন হয়, ঠিক তেমন ভাবে তার ভোল পুরাপুরি পাল্টে গেল। মুহূর্তেই তার চেহারা চেঞ্জ হয়ে একেবারে ভদ্র হয়ে গেলে। হাসি হাসি মুখ নিয়ে, এইত আসছি বলে, সুর সুর করে সে ঘরে চলে গেল। বোঝেন অবস্থা! যে লোক বাঘ মাহিষকে এক ঘাটে পানি খাওয়ায়, সে কিনা একজন সাধারন গৃহিণীকে এমন ভয় পায়। এই গল্প সেই পুলিশ আংকেল ঘটনা ঘটার কিছুক্ষণের মধ্যে, অফিসে এসে হাসতে হাসতে সবাইকে বলেছিল। আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। সবাই শুনে যেভাবে হাসছিল, সে এক বিরাট বিনোদন ছিল!
গল্প-২
এবার আসি বউয়ের বুদ্ধির ব্যাপারে। আগেই বলেছি অনেকেই বউয়ের বুদ্ধিতে চলে। আমি এর ব্যাতিক্রম না। বেশ অনেক দিন আগের ঘটনা। এটা ভৈরব শহরের ঘটনা। তখন দেশে মাত্র সিডির প্রচলন শুরু হয়েছে। পুলিশের কাছে খবর আসল, একজন লোক কিছু সিডির দোকানে থ্রি এক্স সিডি মানে পর্ণ সিডি বিক্রি করছে। পুলিশ দ্রত ঘটনা স্থলে গেল। বেচারা মাত্র কয়েকটি সিডি বিক্রি করেছে। এমন সময় পুলিশ হাতে নাতে তাকে বেশ কিছু সিডি সহ ধরে ফেলল। থানায় নিয়ে আসা হল। বেচারা একেবারে নিরীহ লোক। এমন কাজ করতে পারে ভাবাই যায় না। প্রায় কাঁদো কাঁদো চেহারা। পুলিশও এমন বিনোদন হাতছাড়া করতে চায় না। ওসি সাহেবের রুমে টিভিতে সিডি চালানো শুরু হল। অফিসারেরা সবাই উপস্থিত। ভিডিও শুরু হল। ওমা নায়ক দেখি আমাদের আসামি সাহেব 😀 একেরারে কাঁচা হাতের কাজ 🙂 বলাই বাহুল্য নায়িকা তার সুন্দরী স্ত্রি!
এবার জেরার পালা। বেচারা এবার কেঁদে দিয়েই সব ঘটনা খুলে বলা শুরু করল। সে অনেক দিন সৌদিতে ছিল। সম্প্রতি দেশে এসেছে বিয়ে করার জন্য। আর দেশে থেকেই ব্যবসা বাণিজ্য কিছু করার ইচ্ছা। পাত্রি দেখা শুরু হল। এক্ষেত্রে যেটা হয়। আত্মীয় স্বজন সব ঝাপিয়ে পড়ল পাত্রি দেখার জন্য। ভাল ঘরের সুন্দরি পাত্রি ঠিক করা হল। বিরাট ধুমধাম করে বিয়ে হল। বিয়ের খরচ মেটাতে যেয়ে আর সুযোগ সন্ধানী আত্মীয়দের পাল্লায় পড়ে অতিরিক্ত খরচ করে বেচারা প্রায় ফতুর হবার দশা। জমানো টাকা প্রায় শেষ। সংসার শুরু হল। হাত প্রায় খালি। সে বেকার! কি করবে কিছু বুঝে উঠে পারল না। টাকা ধারের জন্য সব আত্মীয়দের কাছে ধর্না দিতে লাগল। এবার তাদের আসল রূপ বেরিয়ে পড়ল। কেউ হেল্প করল না। বেচারা জিনিস পত্র বেচে সংসার চলানো শুরু করল। এভাবে আর কত দিন? সব প্রায় শেষ। সে ঠিক করল আবার বিদেশে যাবে। কিন্তু টাকা কে ধার দেবে? কেউ এগিয়ে এল না। বেচারা হতাশায় একেবারে মুষড়ে পড়ল। ঘরে সম্বল বলতে ছিল একটা সনি ভিডিও ক্যামেরা। অনেক শখ করে কিনেছিল, বিক্রি করতে মন চায়নি। তার স্ত্রী তাকে অনেক ভালবাসত। তাই তার স্ত্রীই তাকে এই বুদ্ধি দিল, এই ভিডিও বানাবার। যাতে এই সিডি বিক্রি করে সে বিদেশ যাওয়ার টাকা জোগাড় করতে পারে। গল্প এখানেই শেষ। তার কপালে কি শাস্তি জুটেছিল সেটা আমার জানা নেই।
গল্প-৩
সব শেষে আরেকটা গল্প বলব।তখন আমের মৌসুম মাত্র শুরু হয়েছে। প্রায়ই কালবৈশাখী ঝড় হচ্ছে। ফলে বাজারে প্রচুর কাঁচা আম সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে। আমের আঁচার দেয়ার মোক্ষম সময়। বাসার উনি বললেন, বড় দেখে কয়েক কেজি আম কিনে আনতে, আঁচার দিতে হবে। বৃষ্টি হলে খিচুড়ির আয়োজন করতেই হয়, আর সাথে আমার আঁচার! একেবারে সোনায় সোহাগা। অফিস থেকে আসার পথে দেখালাম, বাসার কাছেই মহল্লার মোড়ে, এক লোক ঝুড়িতে কাঁচা আমি নিয়ে বসেছে। দাম কত জিজ্ঞেস করতেই, অমায়িক হাসি দিয়ে বলল, স্যার আপনার জন্য মাত্র পঞ্চাশ টাকা কেজি। দামটা বেশি হয়ে যায়, বলতেই সেটা চল্লিশে নেমে এল। বললাম ০৫ কাজি নেব, কাজেই দাম কমাতে হবে, সে বলল একদাম ৩০ টাকা, শুধু আপনার জন্য। আমি আর কথা বাড়ালাম না। আমি আবার একটু খুঁত খুঁতে টাইপের মানুষ। আম বেছে বেছে দেখতে লাগলাম। বেশ ভাল বড় বড় আম, কোন সমস্যা পেলাম না। সেও হাত লাগাল, বেছে বেছে ০৫ কেজি আম ব্যাগে দিয়ে দিল। আমিও খুশি মনে বাসায় এলাম। বৌয়ের হাতে ব্যাগ দিয়ে, জামা কাপড় ছেড়ে, হাতমুখ ধোঁয়ার জন্য সবে বাথরুমে ঢুকেছি। এমন সময় বৌয়ের চিৎকার চেঁচামেচি, কি আম এনেছ, একমাত্র পাগল হলেই এমন পোকায় খাওয়া আম কেউ কেনে। আমি অবিশ্বাসের দৃষ্টিয়ে বৌয়ের দিকে তাকালাম। বললাম প্রশ্নই আসে না। আমি নিজে আম টিপে টীপে দেখেছি। বউ বলল, তোমার যা রুচি, সব সময় খারাপ জিনিস পছন্দ কর। আমিও রেগে গিয়ে বললাম, তাই বুঝি, তা আমি কিন্তু তোমাকে পছন্দ করেই বিয়ে করেছিলাম।