এক লিটার সরিষার তেল আর একটি জীবনের মূল্য
সেদিন বিকেলে বাজার করতে গিয়েছিলাম। মোটরসাইকেল বাদ দিয়ে সাইকেলে গেলাম। বাজার করতে আমার ভাল লাগে। আব্বা বেঁচে থাকতে বাজার করতে হয়নি। তিনি সব সময় টাটকা আর ভাল জিনিসটাই কিনতেন। এখন আব্বা নেই তার অবর্তমানে আমিই সংসারের কর্তা। তবে আব্বার মত হতে পারিনি। দোকানদারেরা আমাকে প্রায়ই ঠকায়। বাসায় এসে বউয়ের বকা খাই। মা কিছু বলেন না। হয়ত ভাবেন ছেলেটা কত কষ্টই না করে।
আজকে বাজার করে বাসায় ফিরছি। ব্যাগে সব বাজার ধরেনি। তাই সরিষার তেলের বোতলটা সাইকেলে ঝুলিয়ে নিলাম। রাস্তা দিয়ে আসছি, হটাৎ করেই বোতল সাইকেল থেকে পড়ে গেল। প্রায় রাস্তার মাঝখানেই পড়ল।যেহেতু প্লাস্টিকের বোতল তাই কিছুই হয়নি। আমি সাইকেল সাইড করালাম বোতল নেয়ার জন্য। আমার পিছনেই একটা ঢাকার বাস ছিল। ড্রাইভার সবকিছুই দেখছিল। সে বেশ আস্তে আস্তেই আসছিল। বাসটা মাঝ রাস্তা থেকে হালকা বায়ে চাপিয়ে দিয়ে আমার বতলের উপর দিয়ে উঠিয়ে দিল। বেশ একটা শব্দ করে বোতল ফেটে গেল। ড্রাইভার মনে হয় বেশ মজা পেল, কারন তার মুখে হলকা একটা হাসির রেখা দেখলাম। আমিও মজা পেলাম। কারন বোতলের যায়গায় আমিও থাকতে পেতাম। নিশ্চয়ই সেই শব্দেও ড্রাইভার মজা পেত। বোধ হয় একটু বেশিই পেত। যাহোক ড্রাইভার ধিরে সুস্থে বাস নিয়ে চলে গেল।
সবাই এটা দেখে হায় হায় করতে লাগল। কারন গ্রামে এখনো এক লিটার খাঁটি সরিষার তেল অনেক কিছু। যাহোক সামনে আবার তেল কিনতে হবে। বাসায় সাইকেল চালিয়ে আসতে আসতে একটা মজার ঘটনা মনে পড়ে গেল। সেই ২০০৫ সালের ঘটনা। ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি করি। পোস্টিং পিজি হাসপাতালে। জয়েন করার কিছুদিন পরের ঘটনা। এক কোম্পানির একটা ছেলেকে এক আনসার বেদম মারধর করেছিল। প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন করলাম। কোন ডাক্তার ভিজিট হবে না, স্বারকলিপি দিলাম, ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের সেই আন্দোলন মাত্র দুদিনেই নিদারুণ ভাবে বার্থ হয়েছিল কিছু লোকের বিশ্বাসঘাতকতার কারনে। আসলে সবাইকে দিয়ে আন্দোলন চলে না। যা হোক মনে আছে সেই আন্দলনের সময়, চৈত্রের আলস দুপুরে সবাই বসে আছি। সব কিছু খুব নিরব। তখন এই রকম স্মার্ট ফোন ছিল না। তাই সবাই গল্প গুজব করেই সময় কাটিয়ে দিচ্ছিলাম। এক সময় সবাই চুপ করে গেল। আমি নতুন ছিলাম, খুব ছটফট করছিলাম। বসে থাকতে ভাল লাগছিল না। আমার কোম্পানির বড় ভাইকে প্রশ্ন করলাম ভাই এখন কি করব? বলার সাথে সাথেই বলা নেই কওয়া নেই, উপর থেকে ছোট এক বোতল সরিষার তেল পড়ল (সম্ভবত কোন রোগীর ছিল, জানালা দিয়ে পড়ে গিয়েছিল)।তখন একজন বলে উঠল “নে বাবা এখন নাকে তেল দিয়ে ঘুমা”। সবাই হো হো করে হেসে উঠলাম। তখন টিভিতে বিজ্ঞাপনের এই ডায়লগ বেশ জনপ্রিয় ছিল।
বাসায় এসে সরিষার তেলের ঘটনা বললাম। মা বললেন তুমি সুস্থ অবস্থায় এসেছ আর কিছু চাইনা। আমার সরিষার তেল দরকার নেই। মায়ের মন বলে কথা।