বায়ার বিষয়ক আমার কিছু কথা, আর ছোট একটা কিলার টিপস

বায়ার বিষয়ে একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারি। বেশ কয়েক বছর আগের কথা। কালবৈশাখী ঝড়ে প্রায় দুই দিনের বেশি বিদ্যুৎ এবং নেট থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম। তখন আমাদের এখানে মোবাইল নেটও ছিল না। ফলে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরি। যেহেতু গ্রামে থাকি, তাই এখানে কোন কিছু ঠিক হতে অনেক সময় লাগে। যেমন বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার পুড়ে গেলে, সেটা ঠিক হতে প্রায় মাস পার হয়ে যেতে পারে। এই জন্য যেটা করা হয়, সেটা হচ্ছে, এলাকার কিছু মাতবর টাইপের টাউট বাটপাড়, বাড়ি বাড়ি যেয়ে ১০০ টাকা করে চাঁদা উঠায়। মোটামুটি ২৫/৩০ হাজার টাকা উঠে যায়। এখান থেকে কিছু টাকা বিদ্যুৎ অফিসে নাজরানা দিয়ে, বাকিটা নিজেরা ভাগ বাটয়ারা করে নেয়। ১ দিনের মধ্যে বিদ্যুতের লাইন ঠিক।
এটা একটা বেশ ভাল ধান্দাবাজির ব্যাবসা, এই জন্য আমাদের এখানে, সব সময় পুরাতন ট্রান্সফরমার লাগানো হয়, যেন কিছু দিন পর পর এটা পুড়ে যায়। যেহেতু ১০০ টাকা এখন তেমন গায়ে লাগে না, তাই আমরাও এতে অভস্থ হয়ে গেছি। যা হোক আমার বেশ কিছু কাজের ডেলিভারি টাইম, অনেক আগেই পার হয়ে গিয়ছিল। রীতিমত আতংকে ছিলাম, যদি বায়ার কমপ্লেন করে, তবে Fiverr হয়ত ব্যান করে দেবে। বিদ্যুৎ আসার সাথে সাথেই, আমার দেরি হবার কারন জানিয়ে, প্রত্যেক বায়ারকে মেসেজ দিলাম। এর পরে যত দ্রুত সম্ভব কাজ গুলো শেষ করে, জমা দিলাম। অবাক হয়ে দেখলাম, প্রত্যেক বায়ার আমাকে সহানুভূতি জানিয়ে মেসেজ দিল। শুধু তাই নয়, আমার সততা এবং আন্তরিকতার প্রশংসা করল।সবাই ৫ স্টার দিল, কয়েকজন ত কয়েক লাইনের রিভিউ লিখে দিল। আমি সত্যিই অবাক।
বাংলাদেশে এই রকম হলে কি হত জানিনা। একটা ঘটনা শেয়ার করি, বেশ অনেক আগে, অফিসে যাবার পথে মারাত্বক এক মটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হই। পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা পাই। মনে করেছিলাম পা টা মনে হয় ভেঙ্গে দুই টুকরা হয়ে গেছে। অফিসে জানানোর পরও কেউ কোন খোঁজ নিতে আসেনি। ডাক্তার এক মাসের রেস্ট দিয়েছিল। কিন্তু অফিসের চাপে আর দায়িত্বের খাতিরে আহত অবস্থায়ই ৬ দিনের মাথায় অফিসে জয়েন করি। তাঁদের যুক্তি হচ্ছে, যেহেতু টেবিলে বসে কাজ, তাই ভাঙা পা নিয়েও কাজ করা যাবে। অফিসের বস জিজ্ঞেসও করেনি, কোথায় ব্যাথা পেয়েছি। একটু সহানুভূতি পাবার জন্য, সুযোগ পেলেই আমার আহত হবার জায়গা সবাইকে দেখাতাম। মজার ব্যাপার হল, একটু সুস্থ হবার পর পরই, আমাকে পানিশমেন্ট হিসেবে অনেক দূরে পোস্টিং করে দেয়া হয়। পরে জেনেছিলাম তাদের ধারনা হয়েছিল যে, আমি ছুটি কাটানোর জন্য আহত হবার অভিনয় করেছি। অথচ এখনও আমার পায়ে সেই ব্যাথা আছে, বেশি হাঁটলে ব্যাথা করে।
আসলে কারো যদি চাকরি করার অভিজ্ঞতা থাকে, তবে তাঁদের সবারই কম বেশি, এই ধরনের অভিজ্ঞতা আছে। চাকরি লাইফে সব সময় উপরের প্রেশার নিয়েই কাজ করেছি। সত্যি কথা বলতে ফ্রিল্যান্সিং এ আসার পর থেকেই, কারো অধীনে যে আনন্দের সাথে কাজ করা যায়, এটা বোঝা শুরু করি। বায়ারদের কাছ থেকেই শিখেছি, জোর করে একজনকে দিয়ে যতটা কাজ করানো যায়, একটু উৎসাহ দিয়ে, তাকে দিয়েই কয়েক গুন বেশি কাজ করানো যায়। এই জন্য বায়াররা আমাদের টিপস দেয়, কাজের প্রশংসা করে। অথচ দেখা যাবে সব জায়গায় বায়ারদের কত বদনাম। তাঁদের থেকে খারাপ কেউ হতে পারে না। আসলে নেতিবাচক কোন কিছু খুব বেশি ছড়ায়। আর সত্যি বলতে, আমারাও ইচ্ছা করে বায়ারদের ব্যাপারে বেশি বেশি নেতিবাচক কথা বলি। এটা এক ধরনের আত্মতৃপ্তি দেয়। এটাই হিউম্যান নেচার। তাই ফ্রিল্যান্সিং এ একেবারে অজ্ঞ বা নতুন একজন ফ্রিল্যান্সারের আমাদের কথা শুনে হয়ত মনে হতে পারে, বেশিরভাগ বায়ার খারাপ। আসলে এটা ভুল। অধিকাংশ বায়ার হচ্ছে ভাল। দেখা যাবে ৫% এর কম বায়ারের হয়ত কিছু সমস্যা আছে। একটু চোখ কান খোলা রাখলে এবং বিশেষ কিছু দেশের বায়ারদের ব্যাপারে সতর্ক হলে, সহজেই এদের এড়ানো যায়।
বিদেশীদের হয়ত কিছু খারাপ গুন আছে, কিন্তু তাঁদের ভাল গুনের পরিমান অন্তত আমাদের থেকে বেশি। তাই আমরা তাঁদের সেই ভাল গুনগুলো নিতে পারি। আমার মার্কেটিং এর চাকরীর অভিজ্ঞতার আলোকে দেখেছি, যারা সফল ব্যবসায়ী, তারা কাস্টমারকে অত্যন্ত সম্মান এবং মূল্যায়ন করে। সে যত ছোট কাস্টামারই হোক। কারন একজন ছোট কাস্টমার একদিন অনেক বড় কাস্টমারে রুপান্তরিত হতে পারে। সনাতন ধর্মের সফল ব্যবসায়ীরা কাস্টমারকে বলে নারায়ণ। অর্থাৎ তারা কাস্টমারকে দেবতার মত সম্মান করে। আমাদের ইসলাম ধর্মেও সৎ ব্যাবসায়িদের অত্যন্ত উচ্চ সম্মান দান করা হয়েছে। আমরা ফ্রিল্যান্সারেরা হচ্ছি, মুলত ব্যাবসায়ি। এই জন্য দেখবেন, আমাদেরকে সেলার বলা হয়। ব্যাবসায়ি হিসাবে আমার কাস্টমারকে হচ্ছে বায়ার। কিন্তু অনেক সময় দেখি, অনেকেই বায়ারকে অসম্মান করে, বিশেষ করে যারা একেবারেই নতুন। অনেকেই তাদেরকের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে, বাজে কথা বলে। এটা ঠিক নয়। সফল ফ্রিলান্সার হতে হলে, বায়াররের স্বার্থকে নিজের স্বার্থের উপরে স্থান দিতে হবে, সে বায়ার যত খারাপই হোক। Buyer is Always Right এটা যদি মনে প্রানে বিশ্বাস করতে পারেন, তবে আপনি ফ্রিল্যান্সিংএ সফল হবেনই হবেন।
 
ব্যাক্তিগত ভাবে আমি আমার স্বার্থের থেকে বায়ারের স্বার্থ বড় করে দেখি। এটা আমার জব করার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে পেয়েছি। যার কারনে বায়ারদের সাথে আমার সম্পর্কে অত্যন্ত ভাল। এই জন্য আপনাদের দোয়ায়, এখন পর্যন্ত টিকে আছি। আরও একটা তথ্য দেই, সেটা হচ্ছে উন্নত বিশ্বে পরিবার ব্যাবস্থা প্র্যায় উঠে যাচ্ছে। অনেকেই একাকী জীবন যাপন করে। বিশেষ করে একটা নিদিষ্ট বয়সের পরে। বায়ারেরাও এর বাহিরে নয়। তাই আপনি যাদি ভাল কাজ করে তার প্রতি সদয় হন। তার প্রতি যদি একটু সহানুভূতি আর সম্মনা দেখান, দেখবেন বায়ারের সাথে ভাল রিলেশন করতে খুব একটা সময় লাগবে না। তাই সবার প্রতি একটাই পরামর্শ রইল, সেটা হচ্ছে বায়ারের সাথে ভাল রিলেশন তৈরি করবেন। একজন ভাল বায়ার আপানার ফ্রিলান্সিং ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। এটাই আমার সেই কিলার টিপস! আশা করি ইতিমধ্যেই কাজে লাগিয়ে ফেলেছেন। ধন্যবাদ!

Similar Posts