আমাদের বিদেশ যাত্রা
আমাদের বিদেশ যাত্রাঃ
একটা প্রবাদ আছে বাংলাদেশিদের প্রথম প্রেম কাজিন, আর প্রথম বিদেশ কোলকাতা 🙂 এই কথায় কিছু সতত্যা আছে বৈকি! বিদেশে যাওয়া আমাদের রক্তে মিশে আছে। আমার পূর্ব পুরুষেরা জীবিকার তাগিদে বিদেশে গিয়েছে, আমরাও যাচ্ছি। বিভিন্ন কারনে আমরা প্রবাসী হই। বেশির ভাগ জীবিকার সন্ধানে পেটের দায়ে, কেউ লোভে পড়ে, কেউ ভুলে করে, কেউ কৌতূহলে, কেউ এমনিতেই, এর রকম আরও কত বিচিত্র কারনে বিদেশ যায় 🙂 কিছু কিছু এলাকার ঐতিহ্যই হচ্ছে বিদেশ যাওয়ার। অনেক আগে আমি এক চর এলাকার প্রত্যন্ত এক গ্রমে গিয়েছিলাম। অবাক হয়ে দেখলাম, সেই গ্রমের এমন কোন ঘর বাদ নেই যে, কেউ না কেউ বিদেশ আছে। এমনকি এমনও আছে যে একই বাড়ির পাঁচ ছেলে, পাঁচ জনেই বিদেশে। ওদিকে আবার বাড়িতে পাঁচ জন বউ। বাড়ি পাহারা দেয়ার জন্য পুরুষ বলতে বৃদ্ধ বাবা। আবার এই সব এলাকায় মারামারি, চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ, বিশেষ করে ডাকাতি করার সময় ধর্ষণ একেবারে নিত্যদিনের ঘটনা। খুব কম ঘটনাই বাহিরের মানুষ জানতে পারে। আমার মাথায় আসে না এসব চিন্তা মাথায় রেখে তারা কিভাবে বিদেশে থাকে 🙁
এবার আসি কোন জেলার মানুষ বিদেশে বেশি যায়। ২০১৭ সালের এক পরিসংখ্যান থেকে আমরা সহজেই এই ব্যাপারে ধারনা পেতে পারি। ২০১৭ সালে যত লোক বিদেশে গিয়েছে-
১. কুমিল্লা থেকে গিয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৩৮৬ জন
২. ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে গিয়েছে ৫৮ হাজার ১১১ জন
৩. চট্টগ্রাম থেকে গিয়েছে ৫৮ হাজার ৭৫ জন।
৪. ঢাকা থেকে গিয়েছে ৪৮ হাজার ৩৯৬ জন,
৫. চাঁদপুর থেকে গিয়েছে ৪১ হাজার ৭৮৫ জন
৬. নোয়াখালী থেকে গিয়েছে ৪০ হাজার ৮৬২ জন
৭. টাঙ্গাইল থেকে গিয়েছে ৩৯ হাজার ১৫৮ জন
৮. কিশোরগঞ্জ থেকে গিয়েছে ২৮ হাজার ৪০৯ জন
৯. নরসিংদী থেকে গিয়েছে ২৮ হাজার ২৯ জন
১০. মুন্সিগঞ্জ থেকে গিয়েছে ২৭ হাজার ১২২ জন
১১. নারায়ণগঞ্জ থেকে গিয়েছে ২৬ হাজার ১৯৩ জন
১২. সিলেট থেকে গিয়েছে ২৫ হাজার ৩৪৫ জন
১৩. ফরিদপুর থেকে গিয়েছে ২৪ হাজার ৫৯১ জন
১৪. ফেনী থেকে গিয়েছে ২৪ হাজার ৬৮ জন,
১৫.ময়মনসিংহ থেকে গিয়েছে ২২ হাজার ৮৪৬ জন,
১৬. গাজীপুর থেকে গিয়েছে ২১ হাজার ৯০১ জন,
১৭.মানিকগঞ্জ থেকে গিয়েছে ২০ হাজার ৫৬২ জন,
১৮. কক্সবাজার থেকে গিয়েছে ১৯ হাজার ৯৯৬ জন,
১৯.হবিগঞ্জ থেকে গিয়েছে ১৯ হাজার ২৭৪ জন,
২০.সুনামগঞ্জ থেকে গিয়েছে ১৭ হাজার ১৩ জন,
২১.মৌলভীবাজার থেকে গিয়েছে ১৬ হাজার ৬৩৭ জন,
২২.মাদারীপুর থেকে ১৫ গিয়েছে হাজার ৬১১ জন,
২৩.বগুড়া থেকে গিয়েছে ১৪ হাজার ৯২০ জন,
২৪.বরিশাল থেকে গিয়েছে ১৪ হাজার ৬৪৯ জন,
২৫.শরীয়তপুর থেকে গিয়েছে ১২ হাজার ৯৪০ জন,
২৬. পাবনা থেকে ১১ গিয়েছে হাজার ২৬৩ জন,
২৭.ঝিনাইদহ থেকে ১১ গিয়েছে হাজার ১৬৬ জন,
২৮.কুষ্টিয়া থেকে গিয়েছে ১০ হাজার ৩৪৩ জন,
২৯. যশোর থেকে গিয়েছে ১০ হাজার ১৭ জন
এর বাহিরে অন্যান্য জেলা থেকেও কম বেশি অনেকে গিয়েছে। তবে তা ১০ হাজারের নিচে। সুত্রঃ প্রথম আলো
এই হচ্ছে বৈধ ভাবে যাবার পরিসংখ্যান এর বাহিরে অবৈধ ভাবে অনেকেই বিদেশে যাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে বিশেষ কিছু জেলার মানুষের মধ্যে বিদেশ যাবার প্রবনতা অনেক বেশি। এই সকল প্রবাসিরা দেশের উন্নয়নে বিশাল ভুমিকা রাখছে। আমরা কি তাদের সেই কষ্টের প্রতিদান দিতে পারছি 🙁
আমার মতে বিদেশ যাবার ক্ষেত্রে একটা লজিক থাকা দরকার। অনেকেই মাঝ বয়সে বা বেশি বয়সে সব দিকে ব্যর্থ হয়ে বিদেশ যায়। এটা ঠিক না। কারন সে এমনিতেই পরাজিত। বিদেশের মত কঠিন জায়গায় তার ব্যর্থ হবার সম্ভবনা আরও বেশি। আবার অনেককেই দেখি বিয়ে করে নতুন বউ রেখে বিদেশে যায়। আবার অনেকে দেশে এসে বিয়ে করে আবার বিদেশ চলে যায়। আমি এগুলোকে রীতিমত অপরাধ মনে করি। আমার মতে আইন করে এসব বন্ধ করা উচিত। বিস্তারিত বর্ণনায় আর নাই গেলাম।
আমার এক কাজিনের বিয়ে হয়েছে এক জাপান প্রবাসীর সাথে, তাও আবার ভিডিও কলের মাধ্যমে >:( বিয়ে হয়েছে প্রায় ০৫ বছর হল।এখনো সংসার করা হয় নি। এদিকে কিছুদিন আগে তার স্বামীর ব্রেইন স্ট্রোক করেছিল। আসলে কিছু বলার নেই 🙁 এই মেয়ের উপর যে অবিচার হল সেটার জবাব কে দেবে। আমরা সচেতন না হলে এই ধরনের অবিচার চলতেই থাকবে। সামাজিক অবক্ষয়ের কথা আর নাই বা বললাম। আমার এক বন্ধুর মুখে প্রবাসী অধ্যুষিত এক জেলার কাহিনী শুনেছিলাম। সেটা হচ্ছে, সেখানে নাকি প্রচুর বিশেষ ধরনের ক্লিনিক আছে, যাদের কাজই হচ্ছে অবৈধ গর্ভপাত বা এবরশন করানো, এর বাহিরে অন্য কোন কাজ তারা তেমন একটা করে না। বাকিটা আর নাইবা বললাম 🙁
আমি প্রবাসীদের বিরোধী নই। আমি শুধু বলতে চাই যে একটা সিস্টেমের মধ্যে সবকিছু নিয়ে আসা দরকার। আমি মনে করি কারো বিদেশ যাবার ইচ্ছা থাকলে অল্প বয়সেই যাওয়া উচিৎ। মোটামুটি টাকা ইঙ্কাম হলে দেশে এসে, সেই টাকা দিয়ে এমন কিছু কর্ যা দিয়ে সে তার জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। এর পরে বিয়ে শাদী করে সংসার করা। আমার এক ভাতিজা কিছু দিন আগে পাকাপাকি ভাবে দেশে চলে এসেছে। বাজারে একটা দোকান দিয়েছে, ভালই ব্যাবসা করছে। সে বিয়েও করেছে, তার স্ত্রী সন্তান সম্ভবা! এটা দেখে আমার কাছে অনেক ভাল লেগেছে। এমনটাই হওয়া উচিৎ। যদিও বাস্তবে এমন খুবই কম হয়। আমরা যদি একটু সচেতন হই, তবে অবস্থার উন্নতি অনেকটাই হতে পারে। বিয়ে করে বিদেশ চলে যাবে, বা দেশে এসেছে শুধু বিয়ে করার জন্য, এমন ধরনের বিয়ের পুরাপুরি বিরোধী আমি। বিয়ের ব্যাপারে আমার কাছে পরামর্শ চেয়েছিল, এমন কয়েকজনকে এই ধরনের কাজ থেকে ফিরিয়েছি। আমার অনুরোধ থাকবে এই ব্যাপারে আপনারও যেন সচেতন হন।
সবাই ভাল থাকবেন।
ধন্যবাদ!