অনলাইন ফ্রিলান্সিং এর বাস্তব অবস্থা

দেশে এখন ফ্রিল্যান্সিং এর জোয়ার বইছে। দেশের আনাচে কানাচে, অলিতে গলিতে ব্যঙ্গের ছাতার মত ট্রেনিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। মাসে হাজার ডলার ইনকামের গ্যারান্টি। ব্যর্থ বেকার যুবক, চকারিজিবী, গৃহবধূ, স্কুল শিক্ষক, ছাত্র ছাত্রি থেকে শুরু করে মুদি দোকানদার পর্যন্ত এর পিছনে ছুটছে। সরকারও বিভিন্ন প্রজক্টের প্রশিক্ষণের মাধম্যে দেশটাকে ফ্রিলান্সার দিয়ে ভরিয়ে দিতে চেষ্টা চালিয়ে দিচ্ছে। এটা একটা ভাল উদ্যোগ!
 
এবার বাস্তবতায় ফিরে যাই। ফ্রিলান্সিং জব সাইটের মধ্যে আপওয়ার্ককে নাম্বার ওয়ান ধরা হয়। কাজেই এখানে যে দেশ ভাল করছে ধরে নেয়া যায় তারা এগিয়ে আছে। এবার নিচের স্ক্রিনশট লক্ষ্য করুন। বাংলাদেশ লিখে সার্চ দিলে মোট ৫৭৫১৩ জন ফ্রিল্যন্সার পাওয়া যায়। অর্থাৎ এখনে ৫৭ হাজারের মত বাংলাদেশি ফ্রিলান্সার আছে। আমার মতে মার্কেটপ্লেস থেকে যারা নুন্যতম ১০০ ডলার ইনকাম করেছে তাদেরকেই আমি ফ্রিলান্সার হিসেবে ধরব। সেই হিসেবে ফ্রিলান্সার আছে মাত্র ৭১৫৩ জন। আর কোন ইনকাম করতে পারেনি ৪৯৩৭৩ জন। অর্থাৎ মোট ফ্রিলান্সারদের মধ্যে মাত্র ১২.৪৩% ইনকাম করতে পেরেছে। এখন যদি আমি সত্যিকারের ফুল্টাইম ফ্রিলান্সারদের হিসাব করি, যারা পুরাপুরি ফ্রিলান্সিং এর উপর নির্ভরশীল, তবে সেটা ১০% এর নিচে চলে আসবে। কাজেই বুঝতে পারছেন ফ্রিলান্সিং এর বাস্তব অবস্থা। আন্যান্য মার্কেটপ্লেসের অবস্থাও কম বেশি একই। দুঃখের বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে এখন আর আপওয়ার্কএ একাউন্ট খোলা যায় না। আমরা স্পমিং করে, নেগেটিভ কাজ করে আপওয়ার্ক এর দরজা আমাদের জন্য বন্ধ করেছি। এখন সবাই Fiverr এর দিকে যাচ্ছে। Fiverr এও এমন হতে খুব একটা বেশি দেরি নেই। এবং এটাই বাস্তবতা।
 
আমি সাত ঘাটের পানি খাওয়া মাল। অনেকগুলো জব করেছি এবং ব্যাবসাও করেছি বেশ কিছু দিন। আমার কাছে সবথেকে কঠিন কাজ মনে হয়েছে এই অনলাইন ফ্রিলান্সিং। দুঃখের বিষয় হচ্ছে ফ্রিলান্সিং করতে যারা আসেন, বেশির ভাগই অন্য জায়গায় সফল না হতে পেরে বা হতাশ হয়ে ফ্রিলান্সিং করতে আসেন। ফলে তাদের জন্য ফ্রিলান্সিংএর মত কঠিন কাজে, সফল হওয়া
প্রায় অসম্ভব। তবে আমি ফ্রিলান্সিংকে নিরুৎসাহিত করছি না। বাস্তব অবস্থা শুধু চোখে দেখিয়ে দিতে চাচ্ছি।
 
আমি বলব দেশে এখন কাজের অভাব নেই। কাজের নতুন নতুন সেক্টর চালু হাচ্ছে। দক্ষ লোকের বিরাট অভাবে। লক্ষ লক্ষ বিদেশি দেশে কাজ করে কোটি কোটি ডলার নিয়ে যাচ্ছে। দক্ষ লোক নেই বলেই বিদেশীরা কাজের সুযোগ পায়। এটা আমাদেরই দোষ, শিক্ষা ব্যাবস্থা দক্ষ লোক তৈরি করতে পারছে না। এ এক বিরাট ব্যর্থতা। আমার মতে সবাইকে অনলাইন ফ্রিলান্সিং করতে হবে এমন নয়। অফলাইনে চেষ্টা করা উচিৎ। সেখানে সফল হবার সম্ভবনা অনেক বেশি। আর যদি আসলেই এই সেক্টরে আসার ইচ্ছা থাকে, তবে বলব অন্তত এক বছর সময় দিয়ে, ভাল করে নিদিষ্ট বিষয় শিখে, প্রস্তুতি নিয়ে আসেন। আশা করা যায় আপনি সফল হবেন। না হলে ফেল করার সম্ভবনা শতভাগ!
 
একটা কথা বলতে পারি যে একবার ফ্রিলান্সিং এ সফল হয়েছে, শুধু সেই বলতে পারবে ফ্রিলান্সিং এর কি মজা 🙂 এটার স্বাধীনতার সাথে কোন কিছুর তুলনা চলে না। কাজেই সেই মজা পেতে হলে কস্ট একটু করতেই হবে। সাফল্য পেলে সেই কষ্ট পুরাপুরি ভুলে যাবেন। যেমন একজন মা ১০ মাস কষ্ট করার পর, সন্তানের মুখ দেখার পর তার ১০ মাসের অমানুষিক কষ্ট এক মুহূর্তে ভুলে যায়।
 
সবাই ভাল থাকবেন।
 
ধন্যবাদ!

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *