চলতি পথে দেখা এবং ফ্রিল্যান্সারের গল্পকথা

ফ্রিল্যান্সারের গল্পকথা 

চলতি পথে দেখা

ফ্রিল্যান্সারের গল্পকথা  বইটি সাথে নিয়ে ঢাকায় গিয়েছিলাম ডিজাইনার মিটাপে ভাই কেমন আছেন? ঢাকার নাম না জানা ব্যাস্ত রাস্তায়, সম্পূর্ণ অপরিচিত কেউ, আপনার দিকে অবাক হয়ে যদি এই প্রশ্ন করে, তবে আপনার অবশ্যই আতংকিত হবার কথা। ঢাকা বলে কথা 🙂 আমিও এই প্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে থমকে দাড়ালাম। দৌড় দিয়ে ভাগব কিনা, মনে মনে যখন ভাবছি, তখন দেখি রাস্তার ওপাশ থেকে সুদর্শন একজন আমার দিকে অবাক হয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে এগিয়ে আসছে,
আপনি কামরুজ্জামান ভাই না?
আমার নাম শুনে আশ্বস্ত হলাম, আমি হ্যা বলাতে আমার সাথে হ্যান্ডশেক করল। বলল, ভাই আমি আপনার সব লেখা পড়ি, আপনার লেখার আমি একজন বড় ভক্ত, আমি নিজেও ফ্রিল্যান্সিং করি! এর পরে সে গড় গড় করে কথা বলে যেতেই লাগল, মনে হল একজন প্রিয় আপনজনের সাথে, অনেকদিন পর দেখা হয়েছে। পাশের হাঁসপাতালে আমার শাশুড়ি আম্মা ভর্তি, তাকে বললাম সেখানে আসতে। বসে দুই জনে আড্ডা দেয়া যাবে।
আমি হাঁসপাতালে পৌছানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই তার কল, ক্যান্টিনে বসে দুইজনে অনেকক্ষণ গল্প করলাম। দেখলাম সে আমার সম্পর্কে সব কিছুই জানে। দুইজনের গল্প আর শেষই হচ্ছিল না। দুইজন সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষ প্রথমবারের দেখায় এভাবে একে অপরের আপন হতে পারে সেটা অনেকেই হয়ত বিশ্বাস করবে না। লেখক হবার এই একটা সুবিধা, মানুষ সব সময় ইতিবাচক মনোভব পোষণ করে আর দ্রুত আপন করে দেন। আমার যাবার তাড়া ছিল, তাই অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিদায় নিতে হল। তাকে আমার লেখা ফ্রিল্যান্সারের গল্পকথা বইয়ের এক কপি উপহার দিলাম।
আপনারা হয়ত মনে করতে পারেন, এই ধরনের ঘটনা মনে হয় এই প্রথম হ্ল, ব্যাপারটা আসলে তা না, এই ধরনের ঘটনা অনেক বছর ধরে আরও অনেকবার ঘটেছে। আমি জানি না মানুষ কেন এত সহজে আমাকে এত আপন করে নেয়, এত ভালবাসা দেয়। আমিত আসলে এর যোগ্য না। গত মাসে এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল, আমার এক ছোট ভাইয়ের সাথে ঢাকায় এক প্রোগ্রামে গিয়েছি। দুইজনে ধানমণ্ডি স্টার কাবাবে বসেছি সকালে নাস্তা করতে। নাস্তা আসতে দেরি হচ্ছিল তাই বসে বসে মোবাইলে মেইল চেক করছিলাম। মেসেঞ্জারে কেউ একটা ছবি পাঠিয়েছে, চেক করে দেখি এটা রিয়েল টাইমে চেয়ারে বসা আমার ডানপাশের ছবি।
ছবির সাথে মেসেজ “ভাই কি স্টার কাবাবে?”
আমি কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম, ডানপাশে তাকাতেই দেখি একজন আমার দিকে চেয়ে মিটি মিটি হাসছে, আমিও তার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলাম। সে আসলে শিওর হতে চাচ্ছিল যে আসলেই আমি কিনা, এই জন্য মেসেঞ্জারে এই ছবি পাঠিয়েছে। টেবিল থেকে উঠে এসে পরিচয় দিল, উনি আমার লেখার ভক্ত, আমার ব্যাপারে সব কিছুই জানেন। ভাই প্রফেশনালি ফ্রিল্যান্সিং করছেন, ঢাকায় বড় অফিস বড় টিম নিয়ে কাজ করেন। ফ্রিল্যান্সিংএ তার তুলনায় আমি কিছুই না, তার পরেও আমাকে এতটা সম্মান দিলেন যে, আমি লজ্জায় পড়ে গেলাম। সাথে তার স্ত্রি ছিল, ভাবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। ভাবি কিছুটা অসুস্থ, তাই ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাচ্ছেন। বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা চলল, তার অফিস ভিজিট করব এবং তার বাসায় যাব এই কথা দিয়ে উঠে পড়লাম।
করোনার আগে আমাদের ইফতার মাহফিলের কথা মনে আছে। সবার সাথে গল্প আড্ডা চলছে, এক ফাকে এক ফ্রিল্যান্সিং কাঁপল আমাকে অনুরোধ করে পাশে নিয়ে গেল, আমার সাথে কিছু কথা বলতে চান। মনে মনে ভাবলাম হয়ত ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে কিছু টিপস চাইবে। দুই জনেই প্রফেশনালি ফ্রিল্যান্সিং করছেন এবং খুবই ভাল অবস্থানে আছেন। দুজনেই আমার লেখার খুব ভক্ত। শুনে ভাল লাগল। জানালেন আজকের প্রোগ্রামে এসেছেন শুধু আমার সাথে দেখা করতে। আমি কৃতজ্ঞতা জানালাম। এর পরে যেটা আবাদার করলেন সেটার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। ভাবি বাসায় আমার জন্য রান্না করে রেখে এসেছেন। আমাকে রাতে তার বাসায় দাওয়াত খেতে হবে এবং রাতে থাকতে হবে। আমার খুব তাড়া ছিল, আমি সবিনয়ে না করাতে দেখলাম, দুইজনেই খুব মন খারাপ করেছেন। আমার আসলে কোন উপায় ছিল না। বহু কষ্টে তাদের বুঝিয়ে অন্য কোন দিন তাদের বাসায় দাওয়াত খেতে আসব এই কথা বলে তাদের হাত থেকে মুক্তি পেলাম। তাদের সেই করুন চাহনি এখনো চোখের সামনে ভাসে।
আমার এই লেখা পড়ে অনেকের মনে হতে পারে আমি নিজের ঢোল নিজে পেটাচ্ছি। ব্যাপারটা আসলে তা নয়, আমাকে যারা কাছ থেকে চেনেন তারা সবাই জানেন যে নিজের ঢোল পেটানো আমি আসলে কতটা অপছন্দ করি। এই লেখার মাধ্যমে আমি আসলে সেই সব মানুষদেরকে ধন্যবাদ দিতে চাই যারা আসলে আমাকে মন থেকে ভালবাসেন, আমার জন্য মন থেকে দোয়া করেন। আপনাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ, আমার আসলে তেমন কোন যোগ্যতাই নেই, এই সামান্য লেখালেখি করা ছাড়া। এই সামান্য যোগ্যতা দিয়েই চেস্টা করি অন্যকে অনুপ্রেরনা দিতে, অন্যের মন ভাল করতে। জানিনা সেটা কতটূকু করতে পেরেছি। আপনাদের সবার জন্য দোয়া করি, আমার এবং আমার পরিবারের জন্য সবাই দোয়া করবেন।
সব শেষে একটা স্বপ্নভঙ্গের ঘটনা দিয়ে পোস্টের ইতি টানব। আমাদের এক ভাবি আমার লেখার খুবই ভক্ত, আমার কোন লেখা মিস করেন না, আমার ফ্রিল্যান্সারের গল্পকথা বইটি তিনি পুরটা পড়েছেন। ভাবি তার হাসবেন্ড মানে আমাদের ভাইকে বিশেষ ভাবে বলেছেন যে, তার সাথে দেখা হলে আমার ছবি যেন তুলে নিয়ে আসেন। যথারীতি ভাইয়ের সাথে আমার দেখা, তিনি আমার সাথে ছবি তুলে নিয়ে ভাবিকে দেখিয়েছেন। আমার লেখা নিয়মিত পড়ে আর আমার প্রফাইল পিকচার দেখে তার মনে হয়েছে আমি ইয়াং সুদর্শন একজন মানুষ। কিন্তু আমার ছবি দেখে এবং ভাইয়ের কাছে আমার বর্ণনা শুনে জানলেন যে, আমি ৪০ পেরোনো, স্থুল দেহের অধিকারী, দেখতে মোটেও সুদর্শন না, তার উপর চার বাচ্চার বাপ। এর পর থেকে ভাবীর মনটা নাকি খুবই খারাপ।
ভাইয়ের মুখে এটা শোনার পরে আমারও মনটা খারাপ হয়ে গেছে, সেটা নিজের জন্য না, ভাবীর স্বপ্ন ভঙ্গের কারন হবার জন্য। আমার যা আছে সেটা নিয়ে আমি আলহামদুলিল্লাহ্‌ খুবই সন্তুস্ট এবং আল্লাহর দরবারে সব সময় শুকরিয়া আদায় করি। যা হোক ভাবীর ভুল ভাঙানোর জন্য হলেও, আমার প্রফাইল পিকচার দ্রুত চেঞ্জ করব ভাবছি। নিজের অজান্তেই ভাবীর স্বপ্ন ভঙ্গের কারন হবার জন্য, ভাবীর কাছে আমি আন্তরিক ভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।
ধন্যবাদ!
Facebook Comments

Leave a Reply